মত ও পথ
সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন। এরকম নজির বিশ্বের আরও একটা আছে। ঠিক এভাবেই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন আর এক প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো। বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সন্তান জন্মের খবর প্রকাশ্যে আসার পরই ট্যুইট করেন বেনজিরের সেই সন্তান বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি। লিখেছেন, “বেনজির ভুট্টো দেখিয়েছিলেন যে আপনি একই সাথে মা হতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রীও থাকতে পারেন।”
আরও কিছু বিষয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেনজির ভুট্টোর নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। ২১ জুন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন জাসিন্ডা। আর এটাই বেনজিরের জন্মদিন। জাসিন্ডা মা হয়েছেন ৩৭ বছর বয়সে। বেনজিরও ৩৭-এই জন্ম দিয়েছিলেন এই সন্তানের। তবে মাস ছয়েক আগে জাসিন্ডা জানিয়ে দেন যে তিনি গর্ভবতী। তাঁর দায়িত্বও হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, বেনজির পুরো বিষয়টাই গোপন রেখেছিলেন। মন্ত্রী পরিষদের কোনও সদস্যই নাকি জানতেন না যে প্রধানমন্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপেই তাঁকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। বখতাওয়ারের জন্মের সময় পাক সেনা-সমর্থিত একটি রাজনৈতিক জোট সরকারকে ঘিরে ধরেছিল। এমনকী অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সে সময় আইএসআই তাঁর দল থেকে অর্থের বিনিময়ে সাংসদদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল। তাই সেরকম একটা সময়ে দাঁড়িয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি এবং মাতৃত্ব-কালীন কোন ছুটিও নেননি ভুট্টো। তাঁর ব্যক্তিগত গাইনোকলজিস্ট তাঁর অপারেশন করেছিল এবং সন্তান জন্মের পর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তিনি দ্রুত কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
পরে বেনজির ভুট্টো বলেছিলেন, “পরেরদিন আমি কাজে ফিরেছিলাম। সরকারি কাগজপত্র পড়েছিলাম এবং সরকারি ফাইলে স্বাক্ষরও করেছিলাম।” তখন বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।
বখতাওয়ারকে জন্মদানের কয়েকমাস পরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুলাম ইসহাক খান বেনজির ভুট্টোর সরকারকে বরখাস্ত করেছিল। পরে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বেনজির ভুট্টোর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে। তৎকালীন বিরোধী নেতা সৈয়দা আবিদা হুসাইন বেনজির ভুট্টোকে ‘লোভী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মিস ভুট্টো দেশের সেবা না করে বরং ‘মাতৃত্ব, পরিবার এবং গ্ল্যামারের’ দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন।
বেনজির ভুট্টোর আরও দুই সন্তানের জন্মও একইভাবে গোপনেই হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে জেনারেল জিয়া সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সে বছর নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। বেনজির ভুট্টো তখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তাঁর গর্ভে তখন জন্ম নেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
শোনা যায়, গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছিল যে নভেম্বর মাসে বেনজির ভুট্টো সন্তানে জন্ম দেবেন। ফলে, তিনি ভালোমতো নির্বাচনী প্রচার করতে পারবেন না। তার উপর ভিত্তি করেই জেনারেল জিয়া নভেম্বর মাসের শেষ দিকে নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিলাওয়ালের জন্মের খবর আসে সেপ্টেম্বর মাসেই। বলা হয়, বেনজির ভুট্টো ইচ্ছাকৃত-ভাবে সন্তানের জন্মদানের সময় সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করেছিলেন।