বিশ্ববাজারে প্রায় ৭ লাখ কোটি ডলার মূল্যের হালকা প্রকৌশল পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদার বিপরীতে বাংলাদেশে এ শিল্পে বিনিয়োগের আকার ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতে ৪০ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে কর্মসসংস্থান হয়েছে আট লাখ মানুষের। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, মাস্টার ট্রেনার তৈরি ও উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতে মূল্য সংযোজনের পাশাপাশি ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) টুল ইনস্টিটিউট প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘উৎপাদনমুখী প্রকৌশলের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
বিটাকের মহাপরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এনামুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটাক টুল ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক ড. সৈয়দ মো. ইহসানুল করিম। অন্যদের মধ্যে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম নূরুল আমিন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, হালকা প্রকৌশল শিল্পে সনাতনী প্রযুক্তির পরিবর্তে কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল (সিএনসি) মেশিন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে হালকা প্রকৌশল শিল্প বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। বক্তারা শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য হালকা প্রকৌশল শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর ও জনবলের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তারা এ খাতের বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সময় আবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশীয় হালকা প্রকৌশল শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্প-কারখানাগুলোকে সন্নিবেশ করে শিল্পপার্ক গড়ে তুলছে। ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল ও মুদ্রণ শিল্পের জন্য আলাদা শিল্পনগরী স্থাপনের কাজও চলছে। তিনি শিল্পোন্নয়নে প্রকৌশল গ্র্যাজুয়েটদের কার্যকর অবদান নিশ্চিত করতে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি শিল্প-কারখানায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার ওপর গুরুত্ব দেন।