কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে মোটামুটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোট শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ জুন) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এখন চলছে ভোট গণনা। বিভিন্ন কারণে সাতটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন রিটার্নিং অফিসার।
দিনের শুরুতে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে, জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নগরীর কাসেমপুরে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাড়ী হাক্কানিয়া ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। এছাড়া, ব্যালট পেপার সংকটের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরে ভোট গ্রহণ শেষমঙ্গলবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে গাজীপুরের ছয়দানায় নিজ বাসভবন থেকে বের হয়ে কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। সোয়া ৯টার দিকে তিনি ভোট দেন। ভোট দেওয়ার সময় সঙ্গে তার মেয়ে সঙ্গে ছিল। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে যে রায় দেবেন, সেই রায় আমি মেনে নিতে প্রস্তুত। জয়কে জয় আর পরাজয়কে পরাজয় মেনে নিতে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, গাজীপুরের মানুষ আমাকে ভোট দেবে। গাজীপুরে নৌকার বিজয় আনতে পারবো বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
ভোট গ্রহণ শেষে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যালট বাক্সএদিকে, ভোট চলাকালে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর সিটি নির্বাচন বন্ধের দাবি জানান বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০০ কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ভোট বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’ ইসির পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা ভোটগ্রহণ বন্ধ না করে, তাহলে আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ে যাবো।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন– আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপি মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)। ভোটাররা বলছেন, প্রার্থী সাত জন হলেও মূল লড়াই হবে জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান সরকারের মধ্যে।
গাজীপুরে এবার মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। এ সিটিতে এবার নতুন ভোটার এক লাখ ১১ হাজার। এছাড়া, শ্রমিক ভোটার দুই লাখের বেশি। সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৮টিকে সাধারণ চিহ্নিত করা হয়।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ৩৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫৪ জন। সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৮৪ নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। কেন্দ্র পাহারায় ছিলেন পুলিশ, আনসার ও আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে কয়েক হাজার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে ২৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৫৮টি টিম এবং পুলিশের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
এ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসার (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ৪২৫ জন, প্রতিটি কক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২ হাজার ৭৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দু’জন পোলিং অফিসার হিসেবে ৫ হাজার ৫২২ জন ছিলেন।