সরকারি অর্থেই হচ্ছে ৫৬০ মডেল মসজিদ

মত ও পথ

সৌদি আরবের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও সেদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেটি হচ্ছে না। এজন্য নিজস্ব অর্থায়নেই সারা দেশে ৫৬০ উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পসহ ১৪ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ১৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৬৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম,সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩৬টি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় মোট ১ হাজার ১৩৫টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এর মধ্যে সরকারি তহবিল খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রী জানান, একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী না রেখে প্রয়োজন হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার প্রায় এক বছর পার হলেও বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এবং ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তিনি বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কাম ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব সরকারের পুরো প্রকল্পের টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই ৮২ কোটি টাকার একটি চেক দিয়েছে। আশা করছি পরবর্তীতে তারা বাকি টাকাও দেবে।

একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন, ব্যয় ৩ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, ব্যয় ৪৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনের বর্তমান জায়গায় ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ব্যয় ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, ব্যয় ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন, ব্যয় ৩৯৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অফিস ভবন এবং অবকাঠামোসমূহ সংস্কার আধুনিককরণ ও নির্মাণ, ব্যয় ১৯৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর এর অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ১৬০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

৪টি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন, ব্যয় ৩১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩টি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন এবং বর্ধিতকরণ, ব্যয় ১৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

পাবর্ত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ, ব্যয় ৭৬ কোটি টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন), ব্যয় ৫৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ( গোপালগঞ্জ জোন), ব্যয় ৪৮৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে