যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। এদের মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ রয়েছে চরম দারিদ্র্যের কবলে। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটিতে দিনকে দিন ধন বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। দিনে ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সবশেষ হালনাগাদকৃত এক মার্কিন পরিসংখ্যােন এ তথ্য ওঠে এসেছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর হালনাগাদ করা ‘ইউএস সেনসাস ব্যুরোর’ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ জনে ১ জন অন্তত দরিদ্র। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, যাদের পারিবারিক আয় দারিদ্র্য সীমার অর্ধেকের কম। এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যাস্টন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বিপন্ন বাস্তবতার কথা তুলে এনেছেন। তার গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেছে।
দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাস্টন তত্ত্বাবধানে পরিচালিত গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যারা দরিদ্র ছিল তাদের ৪০ শতাংশই ছিল অতি দরিদ্র। ২০১৫ সালে ওই হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এছাড়াও প্রতিদিন মাথাপিছু ২ ডলারেরও কম অর্থে জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়া চরম দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়ছে বেকারত্ব ও সামাজিক সুরক্ষা না পাওয়ার কারণে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের দারিদ্র্যের হিসেবেও এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। ওইসিডি দেশগুলোতে যেখানে এ হার ১৪ শতাংশ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের যুবকদের এক চতুর্থাংশই দরিদ্র।
ওইসিডিভুক্ত উন্নত ৩৭টি দেশের মধ্যে দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৩৫ তম। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি। ‘স্ট্যানফোর্ড সেন্টার অন পোভার্টি অ্যান্ড ইনইকুয়ালিটির’ মতে, অপরাপর উন্নত দেশের তুলনায় দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা শিশুদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। অ্যালস্টন লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী, সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রযুক্তিগত দিকে থেকেও সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। অথচ না তার ধনসম্পদ, না তার প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্য আর না তার ক্ষমতা দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা ৪ কোটি মানুষের অবস্থার পরিবর্তনে নিয়োজিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র জনগণ ও দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে অ্যালস্টন একদিকে যেমন কথা বলেছেন ওয়াশিংটন ডিসির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে, তেমনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন ক্যালিফর্নিয়া, অ্যালাবামা, জর্জিয়া, পুয়েরতো রিকো ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকাগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারিভাবে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তথ্য দিয়েই তিনি দেখিয়েছেন দেশটি দারিদ্র্য নিরসনে কতটা পিছিয়ে। অ্যালস্টনের ভাষ্য, ‘দেশটির দারিদ্র্য পরিস্থিতি তার বৈভবের তুলনায় অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন মানবাধিকারের নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’ তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য নিরসনে কোন জাদু বাস্তবতা সম্ভব না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশে দারিদ্র্য মূলত ক্ষমতাবানদের ভূমিকার ফলাফল। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সর্বোচ্চ দ্রুততায় দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো সম্ভব।