প্রাথমিক শিক্ষা ও সরকারি পরিসংখ্যানের গুণগত মান উন্নয়নের দুই প্রকল্পে ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৫ হাজার ৭২০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে সরকারের সাথে বিশ্বব্যাংকের পৃথক দু’টি চুক্তি সই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ঢাকা অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ উজ জামান। এ ছাড়া, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর এনএসডিএস প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচিটির জন্য প্রাপ্ত আইডিএ ঋণের অর্থ ছয় বছরের রেয়াতসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দেয়া হবে।
কাজী শফিকুল আযম বলেন, দু’টি প্রকল্পই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সব শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি সেই লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে। সময়মতো ও মানসম্মত পরিসংখ্যান নীতি নির্ধারণে সহায়ক হয়। সেই হিসেবে বিবিএসের গুণগত মান উন্নয়নে প্রকল্পটিও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
চিমিয়াও ফান বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের সংখ্যা সাম্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ১৯৯৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে, যা সব শিশুর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যে ভিশন বাংলাদেশের রয়েছে, প্রাইমারি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে নজর দেয়ার মাধ্যমে তা দৃশ্যমান হবে। অন্যদিকে, সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায় না। অন্য প্রকল্পটি বিবিএসের গুণগত মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে আসিফ-উজ-জামান বলেন, ডিসবার্সমেন্ট-লিংকড ইন্ডিকেটর (ডিএলআই) নতুন পদ্ধতি। আশা করছি আমরা এগুলো ভালোভাবে পূরণ করতো পারব। আমরা এই কর্মসূচিতে মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সেইসাথে অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়গুলোও যুক্ত রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে আমাদের পুরো টিম কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কারিক্যুলাম উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক ও টিচিং-লার্নিং উপকরণ সরবরাহ, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকের জন্য শিক্ষা, চলমান পেশাগত উন্নয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার, পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, চাহিদাভিত্তিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার, ঝরে-পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, বিশেষ ও প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষা, ইমারজেন্সি এডুকেশন, যোগাযোগ ও সামাজিক সংহতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিকেন্দ্রীকরণ, গুণগত বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা, বাজেট শক্তিশালীকরণ এবং ক্রয় অর্থ ব্যবস্থাপনা করা।
প্রকল্পের আওতায় সঠিক, নির্ভরযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিসংখ্যান প্রণয়নের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত প্রধান প্রধান জরিপসহ অন্যান্য পরিসংখ্যানগত কার্যক্রমের পরিচালনা পদ্ধতি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সেগুলো যুগোপযোগী করা, দ্রুতম সময়ে তথ্য সংগ্রহ করা, সংকলন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে যথাসময়ে রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত একটি সামগ্রিক আইসিটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এর জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।
অর্থনীতি