রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের খেলায় ফ্রান্সের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। খেলায় শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছেন মেসি-মারিয়ারা। তবে রেফারিংয়ের মান নিয়ে ইতোমধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। খেলায় ৪-৩ গোলে হেরেছে আকাশি-সাদারা। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে রেফারির ভূমিকায় থেকে নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি ইরানের আলিরেজা ফাঘানি। ফ্রান্সের মুখোমুখি হওয়া আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই ছিল চনমনে। মাঝমাঠের পুরোটা ছিল আর্জেন্টিনা দখলে। তবে খেলার মাত্র ১৩ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার গত ম্যাচের তারকা মার্কাস রোহোর মাঝারি ট্যাকলে ডি-বক্সের ভেতরে পড়ে যান ডাম্বেলে। এরপর ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা ফাউলের আবেদন করলে রেফারি কোনকিছু বিবেচনা না করেই পেনাল্টি দিয়ে দেন। আর গ্রিজম্যানের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। রিপ্লেতে দেখা যায়, ডাম্বেলে বল নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গেলে পেছন থেকে ট্যাকল করেন রোহো। এক সময় বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন ফ্রান্সের এই মধ্যমাঠের প্রাণ। এরপর রোহোর হালকা ধাক্কায় পড়ে যান ডাম্বেলে। ডাম্বেলে পড়ে যাওয়ার সময় তার কাছে বলের দখল ছিলো না।। এই ঘটনায় কোনকিছু না দেখেই রোহোকে হলুদকার্ড দেখান রেফারি। আর ফ্রান্সকে উপহার দেন পেনাল্টি। ফুটবলবোদ্ধারা বলছেন, এমন মুহূর্তে রেফারিকে পেনাল্টির মতো সিদ্ধান্ত নিতে হলে আরো সতর্ক হতে হবে। বাজে রেফারিংয়ের শেষ এখানেই নয়। প্রথম গোলের কিছুক্ষণ পর আবারো হালকা ট্যাকলে আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় নিকোলাস টাগলিফিকোকে হলুদ কার্ড দিয়ে ফ্রান্সকে গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ফ্রি-কিক উপহার দেন রেফারি আলিরেজা। এরপর হালকা ট্যাকলে রেফারির হলুদ কার্ডের শিকার হন মাসচেরানো
অন্যদিকে মেসিকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে ট্যাকল করে ফেলে দিলেও কোন ফাউল ধরেননি রেফারি। আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের সামান্য ধাক্কাতেই একের পর এক ফাউল ধরেছেন রেফারি। এদিকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে ফের রেফারির হলুদ কার্ডের ফাঁদে পড়েছেন এভার বানেগাও। মেজাজ হারিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন ওটামেন্ডিও। ‘স্পট পক্ষপাতের’ এই ম্যাচে ফ্রান্সের মাতুইদি ও পাভার্ডও কার্ড দেখেন। কিন্তু ফাউলের অধিকাংশ সিদ্ধান্তই গেছে আর্জেন্টিনার বিপেক্ষ। ঘোর আর্জেন্টিনা বিরোধীরাও বলবেন, নিকোলাস টাগলিফিকো আর মাসচেরানোকে কার্ড দেখানোটা একটু বাড়াবাড়িই হয়েছে রেফারি আলিরেজার। এদিকে ৬০ শতাংশ বলের দখল নিয়ে আজ দুর্দান্ত খেলেছে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের প্রথম গোল ৪১ মিনিটেই শোধ করেন ডি-মারিয়া। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুর্দান্ত খেলা মেসির বলে পা লাগিয়ে গোল করেছেন গ্যাব্রিয়েল মারকাডো। সেই গোল অল্প সময়ের মধ্যে শোধ করেন পাভার্ড। এরপর কর্নার থেকে এগিয়ে যাওয়ার গোল করেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত আরো একটি গোল করেন এই তারকা। শেষের বিশ মিনিটে গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে মেসিরা। একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যায় সাম্পাওলির শিষ্যরা। এদিকে আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়দের তুলে নিয়ে পুরোপুরি ডিফেন্সে চলে যায় ফ্রান্স। বারবার বল মাঠের বাইরে পাঠানো সহ বিভিন্নভাবে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে তারা। তবে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলার শেষ মুহূর্তে মেসির দুর্দান্ত পাসে গোল করেন অ্যাগুয়েরো। ৪-৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও মিটিমিটি জ্বলতে থাকে আর্জেন্টিনার আশার আলো। অতিরিক্ত ৪ মিনিটের খেলার দুই মিনিটই চলে যায় উভয় দলের খেলোয়াড়দের বাকবিতণ্ডায়। তারপরও সময়ের ব্যাপারে ‘কঠোর’ ছিলেন রেফারি আলিরেজা। উল্লেখ্য, এই বিশ্বকাপেই জার্মানির বিদায়ী ম্যাচে অতিরিক্ত ছয় মিনিটের খেলা নয় মিনিট পর্যন্ত গড়ায়। অথচ ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার ম্যাচে উভয় দলের খেলোয়াড়দের বাকবিতণ্ডায় অতিরিক্ত মিনিটের অধিকাংশ সময় নষ্ট হলেও রেফারি আর এটি বিবেচনায় নেননি। এরপর আর খেলায় ফেরা সম্ভব হয়নি আর্জেন্টিনার। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় মেসি-মারিয়ারা।