সংবাদ সংস্থা
রাজধানী ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা এখন ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গায়ে ছ্যাঁকা দেওয়া সেই গরম উপেক্ষা করেই পথে কাল পথে নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। মুখে স্লোগান, ‘‘হে হে হো হো, ডোনাল্ড ট্রাম্প হ্যাজ় টু গো।’’
ওয়াশিংটনই শুধু নয়। শিকাগো থেকে বস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে নিউ ইয়র্ক— কাল একই ছবি দেখেছে ট্রাম্পের দেশ। ছোট-বড় সব শহরে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে দু’জনকে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সেই তালিকায় ছিলেন তাবড়
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, এমনকি সেলিব্রিটিরাও।
মোদ্দা দাবিটা সকলেরই এক। মায়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হোক। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির অবসান হোক এখনই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই নীতির দৌলতে খবরের শিরোনামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সীমান্তে এমন কঠোর নীতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁর নিজের দেশের মানুষই সেই নীতির বিরোধিতায় হাতে হাত মিলিয়েছেন। কাল রাজধানীতে হোয়াইট হাউস এবং পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউয়ে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান কয়েক হাজার মার্কিন নাগরিক। সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে প্রেসিডেন্ট নিউ জার্সি যান। গল্ফ খেলেন ন্যাশনাল গল্ফ ক্লাবে। কিছু বিক্ষোভকারী সেখানেও পিছু ধাওয়া করেছিলেন। কিন্তু চার মাইল দূরে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।
ওয়াশিংটনের বিক্ষোভেই শামিল হয়েছিলেন গায়ক লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা। প্রতিবাদ সভায় নিজের একটি জনপ্রিয় ছোটদের গান গেয়ে বললেন, ‘‘আমরা এখানে জড়ো হয়েছি, কারণ অনেক মা-বাবাই এখন তাঁদের শিশুদের ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে শোনাতে পারছেন না।’’
লস অ্যাঞ্জেলেসের এক সভায় আবার সরাসরি প্রেসিডেন্টকে এক হাত নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট নেত্রী ম্যাক্সিন ওয়াটার্স। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওদের এত সাহস হয় কী করে, মায়ের কোল থেকে শিশুদের ছিনিয়ে নেয়? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি ভেবেছেন আপনি অনেক দূর যেতে পারেন, তাই এ ভাবে পরিবারগুলিকে ভেঙে ফেলছেন।’’ প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে বস্টনের সভা থেকেও। ডেমোক্র্যাট নেত্রী এলিজ়াবেথ ওয়ারেন সেখানে বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অনৈতিক নীতি একটাই রাস্তার দিকে আমাদের সকলকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের নতুন করে আবার অভিবাসন নীতি তৈরি করতে হবে। অভিবাসন আর শুল্ক এনফোর্সমেন্ট দফতরকে (আইসিই) ভেঙেই হবে তার সূচনা।’’
শুধু যে ডেমোক্র্যাটরাই ট্রাম্পের বিরোধিতায় নেমেছেন, এমনটা নয়। নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে ওয়াশিংটনে শুধু মিছিলে শামিল হতে এসেছিলেন দুই তরুণী। দু’জনেই রিপাবলিকান সমর্থক। তাঁদেরই একজন, অ্যালিসন বললেন, ‘‘একটি শিশুকে তার মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করাটা হল সবচেয়ে অমানবিক কাজ।’’ ক্যারি নামের অন্য তরুণীর কথায়, ‘‘মেয়ের সঙ্গে শিশুদের এক ডিটেনশন সেন্টারের ভিডিয়ো দেখছিলাম। দু’জনেই কেঁদে ফেলি।’’
শিকাগোয় কাল ছিল ওয়াশিংটনের মতোই প্রবল গরম। সেখানকার প্রতিবাদ মিছিলে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। তার মধ্যেই দমকল এসে রাস্তায় জল ছিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ছিল জলের পাউচ বিলির ব্যবস্থাও।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এ সবের পিছনে ডেমোক্র্যাটদের ষড়যন্ত্রই দেখছেন। বিতর্কিত (আইসিই) উদ্দেশে টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘‘আইসিই-র কর্মীরা দেশ থেকে সব অপরাধীদের দূরে সরিয়ে রাখার কাজ দারুণ করছ। কট্টর ডেমোক্র্যাটরা তোমাদের সরিয়ে দিতে চায়। তবে ভয় নেই। সেটা কখনওই হবে না।’’
আন্তর্জাতিক