গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি গ্রুপেই বিদায় নিয়েছে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিয়েছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন। যে ভাবে ‘বড়’ ও ‘ছোট’ দলের মধ্যে ফারাক কমছে, তাতে রাশিয়া বিশ্বকাপকে অঘটনের বিশ্বকাপ হিসেবে চিহ্নিত করছে ফুটবলমহল।
আর এখানেই থাকছে আশঙ্কা। কিছুক্ষণের মধ্যেই যে সামারা এরিনায় মেক্সিকোর বিরুদ্ধে নামছে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। অঘটনের কাপ-যুদ্ধ এই ম্যাচকেও প্রভাবিত করবে না তো? তিরতিরে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ব্রাজিল ক্রমশ ফিরেছে ছন্দে। সুইত্জারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র দিয়ে শুরু হয়েছিল অভিযান। দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে জয় এসেছিল অন্তিম লগ্নে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে অবশেষে দেখিয়েছে স্বমহিমায়। ফুটবলাররা ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরেছেন বলেই আশা বাড়ছে সমর্থকদের মধ্যে।
ব্রাজিলের সুবিধা হল, কোনও একজনের ওপর নির্ভরশীল নয় দল। আর্জেন্টিনা বা পর্তুগাল পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ওপর। ব্রাজিল কিন্তু নেমারকে ততটা চাপে রাখছে না। স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা গ্যাব্রিয়েল জেসুস গোলহীন থাকলেও আসছে জয়। বলা হচ্ছে, কুটিনহোই ব্রাজিলের আসল লোক। স্বয়ং কুটিনহো আবার টিমগেমের পতাকা উড়িয়েছেন। বলেছেন, দলের সবাই দায়িত্ব পালন করছে বলেই ব্রাজিল দল হিসেবে এখন অনেক পরিণত।
চার বছর আগের ব্রাজিল কিন্তু পুরোপুরি নির্ভর করেছিল নেমারের ওপর। এবার তিনি চোট সারিয়ে ফিরেছেন। ছন্দে পুরোপুরি ফেরেননি। কিন্তু, সতীর্থরা তা বুঝতে দিচ্ছেন না। ফলে, পুরো দলকে টানতে হচ্ছে না ব্রাজিলের দশ নম্বর জার্সিধারীকে।
ব্রাজিলের সমস্যা হল রক্ষণ। মার্সেলো ও ফ্যাগনার, দু’জনেই আক্রমণে উঠতে ভালোবাসেন। ফলে, রক্ষণে ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকছে। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে মার্সেলো আবার চোটও পেয়েছিলেন। মেক্সিকোর আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। কার্লোস ভেলা, ইয়েরবিং লোজানো, জেভিয়ার ‘চিচারিতো’ হার্নান্দেজরা রক্ষণের ফাঁকা জায়গা কাজে লাগানোর ক্ষমতা রাখেন।
প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল মেক্সিকো। সেই ম্যাচে কাউন্টার অ্যাটাকে জোর দিয়েছিলেন কোচ খুয়ান কার্লোস অসরি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধেও তিনি সম্ভবত প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবলই খেলতে চাইবেন। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে সুইডেন তিন গোলে হারিয়েছিল মেক্সিকোকে। দক্ষিণ কোরিয়া শেষ ম্যাচে জার্মানিকে হারানোয় নকআউটের টিকিট মেলে মেক্সিকোর। অসরি সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তবে তিন গোল হজম প্রশ্ন তুলে দিয়েছে মেক্সিকো রক্ষণ নিয়েও।
মেক্সিকোর বড় ভরসা হলেন গোলরক্ষক গিজেরমো ওচোয়া। চার বছর আগে ব্রাজিলকে গ্রুপের ম্যাচে তিনি একাই জিততে দেননি। এ বারও ওচোয়া মেক্সিকো রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী। নেমার, কুটিনহো, উইলিয়ানদের তাই খেলতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল। কাসেমিরোর ওপর আবার মাঝমাঠেই বিপক্ষ আক্রমণকে রুখে দেওয়ার দায়িত্ব থাকছে।
সামারায় সাম্বা-জাদু কি মন্ত্রমুগ্ধ করবে মেক্সিকোকে়? নাকি, আরও এক অঘটনের সাক্ষী হবে রাশিয়া বিশ্বকাপ? অপেক্ষা আর কিছুক্ষণের।