বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের মতো দুর্দান্ত দলের বিরুদ্ধে ২-০ এগিয়ে গিয়েও শেষমেশ ৩-২ হার! সোমবার মাঝরাতে এডেন অ্যাজারদের বিরুদ্ধে তাকাশি ইনুইদের হারের পরেও দেখলাম বিশ্বজুড়ে প্রশংসা হচ্ছে জাপানিদের ফুটবল মাঠে মরণপণ সংগ্রামের। ম্যাচ শেষে টুইটারে দেখলাম জাপানের প্রশংসা করছেন প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট, সল ক্যাম্পবেলরাও। বেলজিয়াম এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের একটা সাড়া জাগানো শক্তি। এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল কোচ রবের্তো মার্তিনেজ-এর হাতে। তাঁদের বিরুদ্ধে যে লড়াইটা এ দিন করলেন কেইসুকে হন্ডারা তা দেখে আমারও গর্বে বুক ফুলে উঠছে। জাপান ম্যাচটা না জিতলেও রাশিয়ায় বিশ্বকাপ শেষ করল হৃদয়ে থেকে। ম্যাচটা ২-২ হওয়ার পরে জাপানের গোলকিপার এইজি কায়াশিমা যে রকম গোলের তলায় একা কুম্ভ হয়ে মারুয়ান ফেলাইনি, অ্যাজারদের আক্রমণগুলি রুখছিলেন তা মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। গর্ব হচ্ছিল, বেলজিয়ামের মতো এ রকম একটি শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে এশিয়ার একটি দেশের পারফম্যান্স দেখে।টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি (টিএফএ)-তে যখন খেলতাম তখন প্রদীপ স্যর (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে জাপানকে হারানোর গল্প বলতেন। কিন্তু সেই জাপান ও এই জাপানে আকাশপাতাল তফাৎ। ফুটবলার হিসেবে জাপানের বিরুদ্ধে এশিয়ান গেমসে আমিও খেলেছি। যদিও নইমুদ্দিন স্যরের কোচিংয়ে সেই ম্যাচে আমরা জিতিনি। তার পরবর্তী কালে এশিয়ান ক্লাব কাপের ম্যাচে মোহনবাগানের হয়ে জাপানের ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়েছি। তারও আগে অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের হয়ে জাপানের বিরুদ্ধে খেলেছি। কিন্তু প্রতিবারই খেলতে গিয়ে বুঝেছি আমাদের ছাড়িয়ে বিশ্ব ফুটবলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে জাপানের ফুটবল। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে এশীয় যুব চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচটার কথা। সোলে যে ম্যাচ খেলতে গিয়ে জাপানের মুখে পড়েছিলাম। সকালে হোটেলেই শুনলাম, জাপান ওই টুর্নামেন্টের জন্য স্পেনে গিয়ে দু’মাস প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে এসেছে। আসলে জাপানিরা যে বিষয়ে এক বার হাত দেয় তার শেষ না দেখে ছাড়ে না। দেশের প্রতি ভালবাসা, নিরলস মনোভাব, সঙ্গে ইউরোপের মতো পরিকাঠামো বিশ্ব ফুটবলে এত উঁচুতে তুলে নিয়ে গিয়েছে দেশটাকে। এ বারের বিশ্বকাপে যে দলটা নিয়ে খেলতে এসেছেন জাপান কোচ আকিরা নিশিনো, তার বেশ কয়েকজন ইউরোপের সেরা লিগে খেলে। কেউ বুন্দেশলিগায়, কেউ লিগ ওয়ানে, কেউ লা লিগা বা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে এ দেশে খেলতে এসেছিল জাপান। সেখানে তাকেফুসা কুবো বলে একটি বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছিল। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জাপরানের অনুশীলনে সেই কুবোকে দেখতে চলে গিয়েছিলাম। কী অসাধারণ বল কন্ট্রোল ছেলেটির পায়ে। স্কিল, স্পিড, শারীরিক সক্ষমতা সব বিশ্বমানে পাল্লা দেওয়ার মতো। মেসির বেড়ে ওঠার আঁতুরঘর বার্সেলোনার বিখ্যাত ফুটবল স্কুল ‘লা মাসিয়া’ তে বেড়ে উঠেছে কুবো। যেখানে জুনিয়র স্তরে ৩০ ম্যাচে ৭৪ গোল করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল সে। তা হলেই বুঝুন, ফুটবলে জাপানের খুদেরাও কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে। জাপানের হারে তাই কষ্টের বদলে গর্ব হচ্ছে। কাতারে চার বছর পরে ফুটবলে নতুন সূর্যোদয় ঘটাবে জাপান। এই আশাতেই রইলাম।
মত ও পথ