ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ক্লাব ফেয়ার’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন, নবীন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ ও সংগঠনগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরার জন্য প্রতি সেমিস্টারে ক্লাব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মঙ্গলবার শেষ হয় শিক্ষার্থীদের প্রাণের এই মিলনমেলা।
পহেলা জুলাই, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম ও ক্যাফেটেরিয়ায় তিনদিন ব্যাপী ক্লাব ফেয়ার শুরু হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে ক্লাব ফেয়ারে। এই সেমিস্টারে আয়োজিত ক্লাব ফেয়ারের থিম ছিল, ‘মার্ভেল দ্য ক্লাব ফেয়ার।
ক্লাব ফেয়ার উদ্বোধন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আব্দুল মোত্তালিব। শিক্ষার্থীদের এই মিলন মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেবল লেখাপড়া নয়, জ্ঞান রাজ্যের প্রতি শাখায় দারুণভাবে বিচরণ করছে। শিক্ষার্থী ও ক্লাবগুলোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখতে ক্লাব ফেয়ার দারুণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে ক্লাবগুলো পায় নতুন সদস্য আর শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধিও বৃদ্ধি পায়।’
বিকেলে ‘ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটি ড্রামা অ্যান্ড থিয়েটার ফোরামে’র আয়োজনে মঞ্চস্থ হয় গোলাম জাকারিয়ার নাটক ‘কালো নক্ষত্র’। রাতে সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরদিন, সোমবার দুপুর সাড়ে এগারটায় প্রর্দশিত হয় ফুয়াদ চৌধুরী নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘মার্সিলেস মাইহেম: দি বাংলাদেশ জেনোসাইড থ্রো পাকিস্তানি আইজ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট প্রতিফলিত হয়। এছাড়াও যুদ্ধ চলাকালে বাঙালিদের ওপর কী ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে সেটাও দেখানো হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। নয় মাসব্যাপী নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন দেশটির বিশিষ্টজনরা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিবের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা ড. নায়লা খান, শহীদুল্লাহ খান বাদল, হাবিবুল আলম বীরপ্রতিক, কাইয়ুম খান ও আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন।
২৫ মার্চের কালরাত্রিকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি দাবি জানান আলোচকরা। সেই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানান তারা। এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীদের অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরার অনুরোধ জানান ড. নায়লা আলী। আলোচনা শেষে মহান মুক্তিযদ্ধে নিহতদের সম্মানে মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়।
বিকেল তিনটায় জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কথা রয়েছে অভিনেত্রী জয়া আহসান।
ক্লাব ফেয়ারের শেষ দিনে ছিল মঙ্গলবার। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ফুড ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি এদিন হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ব্লাক প্যান্থার প্রদর্শিত হয়। ক্যাফেটেরিয়ায় বাহারি সব খাবারি শিক্ষার্থীদের জিভে জল এনে দেয়। আর সবশেষে নাচে গানে এবারের ক্লাব ফেয়ারকে বিদায় জানান নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা।