‘গোল করে ও করিয়ে যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিলেন নেইমার’ : ডগলাস দা সিলভা

লুইস ফিলিপ স্কোলারির পরামর্শও বাঁচাতে পারল না মেক্সিকোকে। প্রত্যাশা মতোই বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছে গেলেন নেইমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-রা। এ বার অপেক্ষা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের।

ম্যাচের প্রিভিউয়ে দু’টো ব্যাপারে লিখেছিলাম। এক) জার্মানির বিরুদ্ধে যে-রণনীতি নিয়ে খেলেছিল মেক্সিকো, এই ম্যাচেও ওরা সেই ছকে খেলবে। অর্থাৎ, প্রতি আক্রমণে শুরুতেই গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবেন হাভিয়ের হার্নান্দেজ (চিচারিতো)-রা। দুই) মেক্সিকোর বিরুদ্ধেই নিজেকে প্রমাণ করবেন নেইমার।

universel cardiac hospital

আমার অনুমানই ঠিক। প্রথম ২০ মিনিট মেক্সিকোর ফুটবলারেরা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল ভক্তদের। ম্যাচের দু’মিনিটে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গিয়েছিলেন মেক্সিকোর ইয়ার্ভিং লোসানো। ওঁর শট আমাদের ডিফেন্ডার মিরান্দা ফিলহোর গায়ে লেগে কর্নার না-হলে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ত ব্রাজিল। চিচারিতোরা দেখেছিলেন, ব্রাজিলের রাইট ব্যাক পাগেনা লেমোস জায়গায় থাকছিলেন না। ওঁরা তাই বাঁ প্রান্তকেই বেছে নিয়েছিলেন আক্রমণের জন্য।

২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ স্কোলারির খুব ভাল বন্ধু খুয়ান কার্লোস অসরি। নিজের দেশের সর্বনাশের কথা না-ভেবে ম্যাচের আগে মেক্সিকো কোচকে স্কোলারি পরামর্শ দিয়েছিলেন, শুরুতে গোল করে দিলে ব্রাজিল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, ব্রাজিলকে খেলার সুযোগ দিলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন নেইমার-রা।

প্রাথমিক ঝড় সামলে ম্যাচে ফিরতে মিনিট কুড়ি সময় লেগেছিল ফিলিপে কুটিনহোদের। তার পরে কিন্তু সামারা স্টেডিয়ামে সাম্বার নায়কদেরই আধিপত্য। ডান দিক দিয়ে উইলিয়ান। বাঁ দিক দিয়ে গ্যাব্রিয়েল জেসুস। মাঝখানে নেইমার ও কুটিনহো। মেক্সিকো রক্ষণে বারবার আছড়ে পড়ছিল হলুদ ঝড়। কিন্তু গোলটাই হচ্ছিল না। নেপথ্যে গিজেরমো ওচোয়ার অনবদ্য গোলকিপিং। চার বছর আগে গ্রুপ লিগের ম্যাচে মেক্সিকোর গোলরক্ষক কার্যত একাই আটকে দিয়েছিলেন নেইমারদের। এ দিনও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন ওচোয়া। মেক্সিকো গোলরক্ষক একাধিক নিশ্চিত গোল বাঁচান। তবে জানতাম, বেশি ক্ষণ ওচোয়ার পক্ষে ব্রাজিলের আক্রমণের ঝড় সামলানো সম্ভব হবে না। ঠিক সেটাই হল। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার ছয় মিনিটের মধ্যেই নেইমার গোল করে এগিয়ে দিলেন ব্রাজিলকে। এই গোলটাই প্রমাণ করে এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রধান শক্তি দলগত সংহতি।

নেইমারের ব্যাকহিল ধরে গতি বাড়িয়ে মেক্সিকোর পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ঢুকে পড়েন উইলিয়ান। তার পরে ঠান্ডা মাথায় ক্রস করেন। পিছন থেকে উঠে আসা নেইমার গোল করতে ভুল করেননি। ওঁদের দেখে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে রোমারিয়ো-বেবেতো যুগলবন্দির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। নেইমারের পাস থেকেই ৭৯ মিনিটে রবের্তো ফির্মিনহো গোল করলেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই নেইমারকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা চলছে। ওঁর আবেগ নিয়েও বিদ্রুপ কম হয়নি। তিতে বলেছিলেন, সেরা ফর্মে ফিরতে অন্তত পাঁচটা ম্যাচ দরকার নেইমারের। এ দিন ওঁকে দেখে আরও ধারালো মনে হচ্ছিল। যাঁরা এত দিন বলছিলেন, নেইমার স্বার্থপর। নিজে গোল করা ছাড়া কিছু ভাবেন না। তারা এ বার কী বলবেন? গোল করে এবং করিয়ে যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিলেন নেইমার।

দুরন্ত জয়ের রাতে একটাই ধাক্কা— হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন না মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা কার্লোস কাজিমিরো।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে