অঘটনের বিশ্বকাপে রাশিয়া খুঁজছে ভাগ্য

ডেস্ক রিপোর্ট

রাশিয়ার মানুষ পুরানো স্মৃতি নিয়ে বেশি মাতেন না। কিন্তু আজ, শনিবার আধুনিক দেশটা নব্বই মিনিটের জন্য হলেও পিছন দিকে ফিরতে চাইবে। চেরিশেভের রাশিয়া আজ ইয়াশিনকে ছুঁতে চায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানায় রাশিয়া শেষ বার বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠেছিল সেই ১৯৬৬-তে। তারপর আবার আকিনফেভ, জিরকোভদের সামনে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ। ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলেই রাশিয়ার ফুটবলের পুর্ণজন্ম হবে।

universel cardiac hospital

নব্বইয়ের শুরুতে নতুন রাশিয়া তৈরির পর কখনও বিশ্বকাপের শেষ আটে ওঠেনি পুতিনের দেশ। কিন্তু নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে এবং সেখানে তারা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলছে, সেই মজাটা নিতে চাইছে সবাই।

লেভ ইয়াশিনের ’৬৬ রেকর্ড স্মোলভ, জিরকোভরা ছুঁতে পারবেন কি না জানা যাবে আজ শনিবার রাতে। তবে তাদের কোচ চেরিশভ এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘আমরা হৃদয় দিয়ে খেলব। স্পেনের বিরুদ্ধে যে রকম খেলেছিলাম সে রকমই।’’ যা থেকে স্পষ্ট টাইব্রেকারে ম্যাচ নিয়ে গিয়ে ফের ভাগ্য পরীক্ষা করতে চান তিনি। নিজে গোলকিপার ছিলেন স্পার্টাক টিমের। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও নিজের অধিনায়ক এবং গোলকিপার আকিনফেভের উপর সে জন্য তাঁর অগাধ আস্থা। রাশিয়া দলে গোলকিপার পজিশনটা মহার্ঘ। ইয়াশিনের পর রেনাত দাসায়েভ নাম করেছিলেন। তারপর চেরিশেভ এসেছিলেন পরম্পরা মেনে। এখন আকিনফেভ। দলের সব চেয়ে সিনিয়র গোলকিপার আকিনফেভ আর ইগনাশিয়েভিচ। বহুদিন খেলছেন জাতীয় দলে। একটু মাচো চেহারার এবং ভাল কথা বলতে পারেন বলে  যুবাকে পছন্দ করে ট্যাক্সিচালক থেকে ফ্ল্যাটের দারোয়ানও।

রাশিয়া যদি ফের অঘটন ঘটাতে পারে, তা হলে তারা পড়তে পারে ইংল্যান্ডের সামনে। এমনিতে রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ড বা ব্রিটেনের সম্পর্ক ভাল নয় কোনও দিনই। কিন্ত গ্লাসনস্ত, পেরেস্ত্রৈকার পর মুক্তমনা রাশিয়ানরা সেটা নিয়ে এখন মাথা ঘামান না। যেমন  ক্যাসিনো বা স্পোর্টস পাবে বসে খেলা দেখা নিয়েও তাঁদের মাথাব্যথা নেই। তাঁদের ধারণা, হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড হারিয়ে দেবে সুইডেনকে। রাশিয়ার সঙ্গে এ বার অবশ্য অদ্ভুত মিল আছে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের। দু’দলেরই সেরা সাফল্য সেই ছেষট্টিতে। ববি মুরের ইংল্যান্ড সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, ইয়াশিনের রাশিয়া চতুর্থ। তার পর দু’দলই আর কেউ নিজেদের সেই গৌরব ছুঁতে পারেনি।

রাশিয়ার অগ্রগতি নিয়ে খোদ রাশিয়ানদের মধ্যে সংশয়ে থাকলেও সাউথগেটের দেশের লোকজনদের তা নেই। এ বার ইংল্যান্ডের ‘ফুটবল গুন্ডা’দের আটকাতে অভূতপূর্ব ব্যবস্থা নিয়েছে রুশ প্রশাসন। ফলে হাজার চারেকের বেশি লোক আসেনি। তা সত্ত্বেও কলম্বিয়াকে হারানোর পরে রাস্তায় গাড়ির উপর বিয়ারের বোতল নিয়ে নেচেছেন হ্যারির দলের সমর্থকেরা। মেয়েরা রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়েছে। তাতে ট্র্যাফিক জ্যাম হয়েছে।

নেইমার যেমন ব্রাজিলের স্বপ্ন ফেরি করছেন, লুকাকু যেমন বেলজিয়ামের, তেমনই হ্যারি কেন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ইংল্যান্ডকে। তাঁর চার ম্যাচে ছয় গোল সোনার বুটের দিকে পা বাড়িয়ে আছেন বোহেমিয়ান হ্যারি। তাঁকে নিয়ে এতটাই হইচই যে, ইংল্যান্ডের দু’টো প্রদেশের মেয়র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। হ্যারি এ দিন ফের বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা অনভিজ্ঞ, আর কেউ বলবেন না। আমাদের দল স্বপ্ন ছোঁয়ার দল। সুইডেন ভাল। আমরাও।’’ বোঝাই যায় হ্যারি তাঁর রাহিম স্টার্লিং, অ্যাশলে ইয়ংদের উপর ভরসা রাখছেন।

হ্যারি কেনের আলোয় ইংল্যান্ড স্বপ্ন দেখছে ট্রফি জেতার। রাশিয়া খুঁজছে ভাগ্য। অঘটনের বিশ্বকাপে কোনও বিড়াল, কোনও অক্টোপাসের কথাই যে মিলছে না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে