থাইল্যান্ডের গুহা থেকে উদ্ধার ৬, এখনও আটকে ৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গুহা থেকে উদ্ধারের পর অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফুটবলারদের। —এএফপি

অবসান হতে চলেছে ১৫ দিনের উৎকণ্ঠার। থাইল্যান্ডে গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলারকে একে একে বাইরে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন উদ্ধারকারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ জনকে ইতিমধ্যেই গুহা থেকে বের করা সম্ভব হয়েছে। এখনও ভিতরে আটকে রয়েছে ৬ ফুটবলার এবং তাদের কোচ। উদ্ধারকারী দলের এক সদস্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি এই খবর জানিয়েছে। রয়টার্স সূত্রে খবর, ১০ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় দফায় বাকি ফুটবলারদের উদ্ধারের কাজ শুরু হবে।

উদ্ধারের পরই তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ফুটবলাররা সুস্থই আছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।

universel cardiac hospital

গত ২৩ মে নিখোঁজ হয় থাইল্যান্ডের ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। ৯ দিন পর ২ জুন তাদের খোঁজ মেলে গুহার মধ্যে। কিন্তু খোঁজ মেলার পরই উদ্ধার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রবল বৃষ্টিতে জল ঢুকে একাধিক জায়গায় গুহায় ঢোকার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারে নামানো হয় নৌসেনা, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের। ইংল্যান্ড থেকে উড়িয়ে আনা হয় বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরিদের। যোগ দেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে শুরু হয় গুহা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তোলার কাজ।  তার মধ্যেই গুহার ভিতরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।

সব মিলিয়ে উদ্ধারকারী দলে যোগ দেন দেশ-বিদেশের ১০০০ জন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া হয় প্রযুক্তিগত সাহায্যও। অবশেষে রবিবার শুরু হয় চূড়ান্ত অপারেশন। আন্তর্জাতিক ডুবুরিদের ১৩ জনের একটি দল এবং নেভির পাঁচ বিশেষজ্ঞ দল ভিতরে ঢোকে। তাঁরাই একে একে বের করে আনেন ফুটবলারদের। বাইরে প্রস্তুত রাখা হয় হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুল্যান্স। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুরু হয় চিকিৎসা।

একটি স্থানীয় জুনিয়র ফুটবল দল ও তাদের কোচ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই খোঁজখবর শুরু হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তাদের সন্ধান চালাতে সমস্যা হয়। টানা ৯ দিন কার্যত এলাকা চষে ফেলার পর ২ জুন চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং ল্যাং নন গুহার মুখে ফুটবলারদের সাইকেল, জুতো ও অন্যান্য ব্যবহারের সামগ্রী দেখে সন্দেহ হয় তল্লাশি দলের সদস্যদের।

 এরপরই গুহার আরও ভিতরে যাওয়ার পর তাদের খোঁজ মেলে। যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। জানা যায় গুহা মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে ফুটবলাররা একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। ওই জায়গাটি মাটির উপর থেকে প্রায় এক হাজার মিটার গভীরে।

তারপর থেকেই সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের নজর গিয়ে পড়ে ওই গুহার কাছে। পাশাপাশি শুরু হয় উদ্ধারের তৎপরতা। থাইল্যান্ডে বর্ষা শেষ হয়ে স্বাভাবিকভাবে গুহার জল শুকিয়ে উদ্ধারের পরিস্থিতি তৈরি হতে অন্তত তিন মাস অপেক্ষা করতে হত। সেই মতো ভিতরে খাবারও পাঠানো হয়। আবার প্রথম দিকে ঠিক হয়, ডুবুরিরা ভিতরে ঢুকে ওই কিশোরদের ডাইভিং-এর প্রশিক্ষণ দেবেন, যাতে তারা নিজেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।

কিন্তু তাতে ঝুঁকি থেকে যেত। তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, খেলোয়াড় পিছু দু’জন করে ডুবুরি ভিতরে পাঠানো হবে। এই পুরো পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলার মধ্যেই গুহার ভিতরে ঢুকতে গিয়ে মারা যান এক ডুবুরি। থাইল্যান্ডে এরকম গুহার মধ্যে আটকে পড়ার ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটলেও গুহার এত গভীরে এভাবে একসঙ্গে এতজন আটকে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে