এই যে মেঘ এই যে মেঘ, ঘোর অন্ধকার- কেবলি ডাকে আমি মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়ি। বস্তুত মেঘও কৈশোরের প্রেমের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ! মেঘ দেখলে শরীর জাগে, অন্ধকারও তাই! কেন কেঁপে উঠো- খোঁজ অবলম্বন? জানো তো- জীবন এক মুহূর্তের নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়। নত হও- ধ্যানমগ্ন প্রার্থনার চেয়েও গভীর আস্থায় হয়তো কিছু হবে কিংবা না। কী এমন আসে যায় জীবনও যাপন ছাড়া আর কিছু নয়। এই যে দেখো- প্রতিরাতে আমরা ফুল ফোটানোর ইচ্ছে করি। ফোটে কী? কত গোপন ইচ্ছে অবৈধ ভ্রুণের মতো রক্ত হয়ে ঝরে কে রাখে কার খবর? এসো যাপন করি- মেঘকে ভালোবেসে ডেকে আনি বৃষ্টি- এমন কি খানিকটা ঘোর অন্ধকার! আমি বলছি না এমন হবে! ধরো, তোমার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে পুরনো প্রেমিকার বাড়ির সামনে কিংবা আগুন হাতে বিষণ্ন দুপুরে আত্মহত্যাকে জলের মতো গিলে নিলাম! তুমি নিশ্চয় তখনো অপেক্ষা করবে। আমি হয়তো হাজারটা অজুহাত ধুলোর মতো গায়ে মেখে তোমার পাশে দাঁড়াব। এমন কি ভুল করে একগুচ্ছ গোলাপও কিনে দিতে পারি! আমি বলছি না এমন হবে। তারপরও বলি... ধরো, রাতভর বৃষ্টিতে ভিজে আমার জ্বর হলো তুমি শান্ত শীতল অথচ বিবর্ণ ছাতিম গাছটার মতো পাশে বসে ভবিষ্যত পাহারা দিচ্ছো। আর আমি? অন্ধগলিতে ওমের অপেক্ষায় থাকা মেয়েটির কথা ভাবছি! ধরো, আমার কোন কিছুতেই বিশ্বাস নেই এমন কি তোমাকেও। তুমি নিশ্চয় বিষপানে অমরত্ব ছোঁবে না। আমি বলছি না এমন হবে। তারপরও বলি... যখন কেউ কারও পাশে নেই কিংবা মা সন্তানকে হত্যা করে রাতের আঁধারে পালায় আমি তখন বধির সময়কে অভিশাপ দিই। সুতরাং আমাকে ভালোবাসার আগে তোমার সর্তক থাকা উচিত! আমি তুমি হয়তো কত কিছুই ঘটে। কেউ কি তা মনে রাখে? হয়তো রাখে নদী কিংবা দূরের মাঠ! কেউ কেউ নিশ্চয় চিঠি লিখে অথবা আত্মকথন! তুমি আমি কখনো বুঝি কখনো বা বুঝি না। তারপরও রাত আসে, আসে অন্ধকার কেউ কেউ হাতড়ে বেড়ায় কেউ বা হাঁটে দিনের মতো মাথা উঁচু করে। আমি তুমি হয়তো এসবের কিছুই দেখি না... বড় অসহ্য ঠেকছে সবকিছু! আমাকে তোমার সঙ্গে নাও কাছাকাছি কিংবা দূরে কোথাও বড় অসহ্য ঠেকছে সবকিছু! আমি বলছি না- জড়িয়ে ধরো কিংবা আস্থা রাখো আমার উপর! কেননা আমি জানি- আমি যা ভাবছি তা আমার না! আমি যা বলছি তা আমার না! এমনকি দীর্ঘশ্বাসে মোড়ানো বেদনাও আমার না! অথচ আমি জানি। সব জানি। আমার ধারালো অস্ত্রগুলো ক্রমাগত কৈশোরের মতো হারিয়ে যাচ্ছে একটা শিশুর ক্রন্দনও আজকাল থামাতে পারি না। বড় অসহ্য ঠেকছে সবকিছু! আমাকে তোমার সঙ্গে নাও কাছাকাছি কিংবা দূরে কোথাও। আমি বলছি না- তুমি আমাকে উষ্ণতা দিয়ে এই সব ভুলিয়ে দাও কিংবা ভুলে থাকতে চাই। শুধু তোমার সঙ্গে নাও বড় অসহ্য ঠেকছে সবকিছু! মানুষের মুখ দেখলে খুনিকে চিহ্নিত করতে পারি না। এমনকি নিজেকেও না। অথচ আমি জানি- প্রতিটি মানুষ মুখোশের আড়ালে প্রকৃত অর্থে খুনি! তুমি কী আমার মুখ মনে রেখেছো? যাব যাব করে আর যাওয়া হয় না কোথায় যাব, কার কাছে যাব? পরিচিতমুখগুলো বেওয়ারিশ লাশের মতো অচেনা লাগে! নিজেকেও নয় কী? তবু আশা রাখি। মুখোমুখি বসলে হয়তো কিছু একটা হবে। আমার যাওয়া হয় না। বড় অসহায় লাগে। বাড়ির কথা মনে পড়ে- যদিও কবে গিয়েছিলাম ভুলে গেছি! কড়ারোদ বারান্দায় আলো ফেলে। মুখোমুখি বসি নিজের চেহারা মনে করতে পারি না। কেননা, আমার ঘরে কোনো আয়না নেই। তুমি কী আমার মুখ মনে রেখেছো? তারপরও মনে হয় দেখি না! প্রতিদিনই তোমাকে দেখছি। তারপরও মনে হয় কতদিন দেখি না। তবে কি আমি অন্ধ! নাকি চোখজোড়া লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে? অথচ দেখো- তোমাকে না দেখার অসুখ ছায়ার মতো জড়িয়ে রেখেছে। আমার ঘুম নেই। চোখের প্রতি আস্থাহীনতা কেবলি বাড়ছে! তোমাকে ছাড়া কার ওপর আস্থা রাখি বলো- নদীও এখন ভাগাড়। আর পাখিরা? তাড়িত মশার মতো দূর অতীতের গান শোনায়। তবে কি আস্থাহীনতার সংকটে মানুষ? যদি আর ফিরে না আসি যদি আর ফিরে না আসি- কী এমন হবে? পথের বাঁকের মতো কত কিছুই তো মিলিয়ে যায়! তারপরও তোমাকে বলি-অধীর আগ্রহে কেউ নিশ্চয় ডানাভাঙ্গা পাখির মতো পথে বসে আছে-আর? আমি না হই হারিয়ে গেলাম! বস্তুত আমার বা তোমার জন্য কিছুই আসে যায় না। অলঙ্করণ : রাজিব রায়