‘ফরাসি বিপ্লব’ নাকি ‘বেলজিয়াম রূপকথা’৷ আজ রাত ১২টার হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালের ভবিষ্যত কী তা সময়ই বলবে৷ পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বকাপের আসরে দ্বিতীয়বার সেমিফাইনাল খেলতে নামা টিনটিনের দেশের চেয়ে খাতায় কলমে এগিয়ে ফ্রান্স৷
কারণ একটাই, অভিজ্ঞতা এবং বড় মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতায় অ্যাডভান্টেজ ফ্রান্সের৷ দু’বছর আগে ইউরো ফাইনাল খেলা টিমের পাঁচ জন রয়েছে ২০১৮ বিশ্বকাপ দলে৷ সেমিফাইনাল-ফাইনালের মতো মঞ্চে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখাটা ভালই জানেন জিরুড-উমতিতি-হুগো লরিসরা৷ রাশিয়ার মঞ্চে ষষ্ঠ সেমিফাইনাল খেলতে নামছে ফ্রান্স৷ শেষবার ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলেছিল ফরাসিব্রিগড৷ সেবার অবশ্য ফাইনালের মঞ্চে টাইব্রেকার জিদানদের হারতে হয়৷
বেলজিয়ামের সঙ্গে শেষ তিন সাক্ষাতে দুবারই জয়ের মুখ দেখেছে ফরাসিব্রিগেড৷ সেটা অবশ্য একুশ শতকে নয়৷ এই দুই জয় এসেছে উনিশ শতকে৷ বিশ্বকাপ মঞ্চে শেষবার ১৯৮৬ সালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছিল বেলজিয়াম৷ মেক্সিকো বিশ্বকাপে সেবার তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে বেলজিয়ামকে পেনাল্টিতে হারিয়ে থার্ড বয় হয়েছিল ফ্রান্স৷ ঐ বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনার কাছে সেমিফাইনাল হেরেছিল বেলজিয়াম৷ ম্যাচে দুটি গোলই করেছিলেন ম্যারাডোনা৷
তার আগে ফান্স বনাম বেলজিয়াম লড়াই সেই চল্লিশের দশকে৷ ১৯৩৮ সালে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে বেলজিয়ামকে ৩-১ হারিয়েছিল ফরাসিরা৷ এখানেই শেষ নয়, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে ফ্রান্সের কাছে ৫ গোলের হারের লজ্জা এখনও বেলজিয়ামের কাছে দুঃস্বপ্নের সমান৷ ১৯৮৪ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে সেবার হ্যাটট্রিক করে বেলজিয়ামের কফিনে পেরেক পুঁতে দিয়েছিলেন মিচেল প্লাতিনি৷ বড় মঞ্চে ফ্রান্সের কাছে এই হারের স্মৃতি কাঁটা হতে পারে বেলজিয়ামের৷
নয়া প্রজন্মের লুকাকু-হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনরা অবশ্য অন্য ধাতুতে গড়া, তা তারা প্রমাণ দিচ্ছেন৷ বিশ্বমঞ্চে বেলজিয়ামকে অন্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন এই তারকারা৷ বর্তমানে ফিফা ব়্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়ামের স্থান রয়েছে তিনে৷ আর ফ্রান্স চার ধাপ পিছিয়ে রয়েছে সাতে৷ রাশিয়া বিশ্বকাপের কালো ঘোড়া বেলজিয়ামকে নিয়ে তাই স্বপ্ন দেখাই যায়৷
চলতি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের মতো এখনও পর্যন্ত একটি ম্যাচও হারেনি লুকাকুরা৷ প্রি-কোয়ার্টার জাপানের কাছে ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে ফিনিক্সের মতো জ্বলে ওঠা৷ কোয়ার্টারে আবার শক্তিশালী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে শেষ পর্যন্ত ২-১ ম্যাচ জয়৷ বেলজিয়ামের অন্যতম শক্তি গতি৷ শেষ ম্যাচে সেই গতির সামনেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্রাজিল৷ রেড ডেভিলসদের সামনে ফ্রান্স কেমন পারফরম্যান্স করে সেটাই এখন দেখার৷ দুই দলে আবার তারকার ছড়াছড়ি৷ ফ্রান্সে জিরুড, গ্রিজমান,এমবাপে, পোগবারা যেমন রয়েছেন বেলজিয়ামে তেমনই রয়েছেন লুকাকু, হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনরা৷ মেগা সেমিতে তারকার মেলায় নতুন তারার উত্থানের অপেক্ষায় ফুটবলদুনিয়া৷