এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচন ও কমিটি গঠন নিয়ে রাজনীতির মাঠে আলোচনায় রয়েছে ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ও সংগঠনটির নতুন কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রলীগ কেমন ভূমিকা রাখবে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে পারিবারিক ঐতিহ্য ও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকাকেই এবার বিবেচনায় নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগের একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দেবেন বলে মনে করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মতে, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করাই হবে ছাত্রলীগের প্রধান কাজ। সে লক্ষ্যেই তাদের কাজ করতে হবে। ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের কমিটি ঘোষণা করবেন, এমন সংবাদের পর নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা জানান, শেখ হাসিনার পছন্দে যারাই নেতা হয়ে আসবেন, তাদের ব্যাপারে কারও কোনও আপত্তি থাকবে না। এদিকে কবে নাগাদ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে, এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোনো নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা মত ও পথকে বলেন, কবে নাগাদ ছাত্রলীগের কমিটি হবে, এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ই কমিটি ঘোষণা করবেন।
তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য ছাত্রলীগের যে একটি গুরুত্বপূর্ণও ভূমিকা থাকবে, এ ব্যাপারে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত, সবাই একমত পোষণ করেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য আরিফা রহমান রুমা বলেন, ‘ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার বিষয়টিকে আমি খুবই পজেটিভলি নিচ্ছি। নতুন কমিটি হওয়ার মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উচ্ছ্বাস জেগে উঠবে। আর নতুন যারা আসবে, তারা অবশ্যই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো না কোনো পদে ছিলেন। তাই তারা যে হুট করে উঠে আসবেন, ব্যাপারটা কিন্তু সে রকম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দায়িত্ব নিয়ে কমিটি করবেন। এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ ছাত্রলীগের জন্য আর কিছু হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রধান কাজ হবে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা। একজন তরুণই আরেকজন তরুণের মনোভাব বুঝতে পারেন। একজন তরুণ ভোটার কোনও সরকারের প্রতি তার চাহিদার কথা আরেকজন সমবয়সীর সঙ্গে ভালোভাবে শেয়ার করতে পারবে। তাই ছাত্রলীগের তরুণ ভোটারদের কাছে গিয়ে সরকারের প্রচার এবং উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে হবে।’
ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী বলেন, ‘সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে যদি সংখ্যায় গণনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ৩০ লাখের বেশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। ৩০ লাখ নেতাকর্মী যদি তাদের ৩০ লাখ ভোট নিশ্চিত করেন, একইসঙ্গে তাদের পরিবারের কমপক্ষে ৫ জন সদস্যের ভোট নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে এখান থেকে দেড় কোটি ভোট আসবে। ছাত্রলীগ যদি কাজ করে নির্বাচনে ভোট আদায় করতে চায় তাহলে ছাত্রলীগের ঘরে ঘরে যাওয়ার আগে এই ভোট নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার বিগত ৯ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, সেই উন্নয়নের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সুনির্দিষ্টভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি আমলে মানুষের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে হবে। শুধু মিছিল মিটিং কিংবা ক্যামেরাবাজি করে ভোট আদায় করা যাবে না। মানুষের অন্তরে পৌঁছাতে হবে। প্রায় দুই কোটি তরুণ ভোটার রয়েছে। তাদের সঙ্গে গিয়ে কাজ করতে হবে ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ যদি তরুণদের মাঝে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে সাড়া জাগাতে পারে, তাহলে শুধু ওই তরুণরাই নয়, তাদের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হবে। তবে ছাত্রলীগকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন তাদের গায়ে কোনো কালিমা না লাগে।’
আসন্ন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নির্বাচনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে জয়দেব নন্দী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার যে দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন, সেটি ছাত্রলীগের জন্য আশীর্বাদ। আগামী দিনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের মানসিক ভিত্তি নেত্রী নিজেই তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি পদপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর যারা নেতৃত্বে আসবেন, তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে কেন্দ্রীয় অথবা ইউনিট নেতা। জনবিচ্ছিন্ন কিংবা ছাত্র সংশ্লিষ্ট নয়, এমন কেউ কমিটিতে আসবেন না, সেটা শতভাগ নিশ্চিত। তাই নতুনদের সামনে আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করা ছাড়া অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ আছে বলে আমি মনে করি না।’
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী গুলশাহানা উর্মি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও কিন্তু ছাত্রলীগের একটা অংশ। সবাই মিলে আমাদের উচিত হবে বাংলাদেশের সব জেলায় টিম হিসেবে বিভক্ত হয়ে একদম তৃণমূল পর্যন্ত সরকারের প্রচার প্রচারণার কাজ করা। জনগণকে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সম্পর্কে জানাতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা যে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে সেটা বোঝাতে হবে। শুধু প্রচার করলেই হবে না, সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারগুলোকেও রুখতে হবে। এছাড়া আর কোনও বিকল্প নাই।’