সফল তিনদিনের উদ্ধার অভিযান। থাইল্যান্ডের গুহা থেকে কোচ ও ১২ জন ফুটবলারকেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হল। আজ ছিল অভিযানের তৃতীয় দিন। আজকে উদ্ধার করা হয় আরও চারজন কিশোর ফুটবলার ও কোচকে। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, উদ্ধারকাজ কতটা চালু করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন অনেকেই। প্রতিকূলতার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত শুরু হয় উদ্ধারকাজ। মঙ্গলবার উদ্ধারকাজ শুরুর ছ’ঘন্টার মধ্যেই তিন ফুটবলার উদ্ধার হওয়ায় আশা বাড়ে সবার মনে। শেষ পর্যন্ত বাকি এক ফুটবলার ও কোচকেও শেষবেলায় উদ্ধার করে তাইল্যান্ড সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ১৫ দিনের উৎকণ্ঠার।
গত রবিবার থাইল্যান্ডে গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলারকে একে একে বাইরে নিয়ে আসতে শুরু করে উদ্ধারকারীরা। গত ২৩ মে নিখোঁজ হয় থাইল্যান্ডের ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। ৯ দিন পর ২ জুন তাদের খোঁজ মেলে গুহার মধ্যে। কিন্তু খোঁজ মেলার পরই উদ্ধার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কারণ প্রবল বৃষ্টিতে জল ঢুকে একাধিক জায়গায় গুহায় ঢোকার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারে নামানো হয় নৌসেনা, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের। ইংল্যান্ড থেকে উড়িয়ে আনা হয় বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরিদের। যোগ দেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে শুরু হয় গুহা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তোলার কাজ। তার মধ্যেই গুহার ভিতরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে উদ্ধারকারী দলে যোগ দেন দেশ-বিদেশের ১০০০ জন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া হয় প্রযুক্তিগত সাহায্যও। রবিবার শুরু হয় চূড়ান্ত অপারেশন। আন্তর্জাতিক ডুবুরিদের ১৩ জনের একটি দল এবং নেভির পাঁচ বিশেষজ্ঞ দল ভিতরে ঢোকে। তাঁরাই একে একে বের করে আনেন ফুটবলারদের। বাইরে প্রস্তুত রাখা হয় হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুল্যান্স। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুরু হয় চিকিৎসা। একটি স্থানীয় জুনিয়র ফুটবল দল ও তাদের কোচ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই খোঁজখবর শুরু হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তাদের সন্ধান চালাতে সমস্যা হয়। টানা ৯ দিন কার্যত এলাকা চষে ফেলার পর ২ জুন চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং ল্যাং নন গুহার মুখে ফুটবলারদের সাইকেল, জুতো ও অন্যান্য ব্যবহারের সামগ্রী দেখে সন্দেহ হয় তল্লাশি দলের সদস্যদের। এরপরই গুহার আরও ভিতরে যাওয়ার পর তাদের খোঁজ মেলে। যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
জানা যায় গুহা মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে ফুটবলাররা একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। ওই জায়গাটি মাটির উপর থেকে প্রায় এক হাজার মিটার গভীরে। তারপর থেকেই সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের নজর গিয়ে পড়ে ওই গুহার কাছে। পাশাপাশি শুরু হয় উদ্ধারের তৎপরতা। থাইল্যান্ডে বর্ষা শেষ হয়ে স্বাভাবিকভাবে গুহার জল শুকিয়ে উদ্ধারের পরিস্থিতি তৈরি হতে অন্তত তিন মাস অপেক্ষা করতে হত। সেই মতো ভিতরে খাবারও পাঠানো হয়। আবার প্রথম দিকে ঠিক হয়, ডুবুরিরা ভিতরে ঢুকে ওই কিশোরদের ডাইভিং-এর প্রশিক্ষণ দেবেন, যাতে তারা নিজেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু তাতে ঝুঁকি থেকে যেত। তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, খেলোয়াড় পিছু দু’জন করে ডুবুরি ভিতরে পাঠানো হবে। এই পুরো পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চলার মধ্যেই গুহার ভিতরে ঢুকতে গিয়ে মারা যান এক ডুবুরি। থাইল্যান্ডে এরকম গুহার মধ্যে আটকে পড়ার ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটলেও গুহার এত গভীরে এভাবে একসঙ্গে এতজন আটকে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন।