ইংল্যান্ড শেষবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল ১৯৯০ সালে। তখনও পরাধীন ক্রোয়েশিয়া। পরের বছর মিলল স্বাধীনতা। এমনই ফুটবল ঐতিহ্য যে স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিলেন দাভর সুকেররা। এবার লুকা মদরিচদের চ্যালেঞ্জ আরও একধাপ এগিয়ে ফাইনালে পৌঁছনো। ইতিহাসের হাতছানির সামনে সুকেরের উত্তরসূরিরা।
কুড়ি বছর পর বিশ্বকাপের শেষ চারে ক্রোয়েশিয়া। আঠাশ বছর পর উঠেছে ইংল্যান্ডও। এখনও পর্যন্ত সাত বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে বড় প্রতিযোগিতায় একবারই দেখা। ২০০৪ সালের ইউরোতে। সেবার ইংল্যান্ড জিতেছিল। শেষ দু’বারের দেখাতেও বড় ব্যবধানে জিতেছে তারা। ইতিহাস, মুখোমুখি সাক্ষাৎ, এগিয়ে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ জেতার ঐতিহ্যও রয়েছে। তবে তার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গিয়েছে। ৫২ বছর পর ফের বিশ্বজয়ের গন্ধ বাতাসে। টেমসের পাড়ে উন্মাদনা তাই অন্য চেহারা নিয়েছে।
ক্রোয়েশিয়া আবার নতুন ইতিহাস লিখতে মরিয়া। প্রথমবারের জন্য ফাইনালে ওঠার তাগিদ শিবির জুড়ে। দলে রয়েছেন মদরিচ, ইভান রাকিতিচের মতো তারকারা। এই দু’জনকে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডারের মধ্যে ধরা হচ্ছে এখন। গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচে জেতা বাড়িয়েছে মনোবল। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচের মধ্যে চারটিতেই বিপক্ষের চেয়ে বলের দখল বেশি ছিল ক্রোয়েশিয়ার। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও বল পায়ে রাখতে চাইবেন তাঁরা।
দলে ভরপুর অভিজ্ঞতা। গোলরক্ষক সুবাসিচ, স্ট্রাইকার মারিও মাঞ্জুকিচরাও পেরিয়ে গিয়েছেন তিরিশের গণ্ডি। দেশের ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য সোনালি প্রজন্মের এর চেয়ে ভালো সুযোগ আসবে না।তবে ক্রোয়েশিয়ার দুর্বলতা হল সেটপিস। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেও ফ্রি-কিক থেকেই হজম করতে হয়েছিল গোল।
ইংল্যান্ডের শক্তি আবার এই সেটপিসেই। রক্ষণের বাঁ-দিক নিয়েও চিন্তা রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। যার সুবিধা নিতেই পারেন ইংল্যান্ডের রাহিম স্টারলিং ও জেসে লিনগার্ড। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেন অধিনায়ক হ্যারি কেন। ছয় গোল করে ফেলেছেন তিনি। সোনার বুট পাওয়ার দৌড়ে তিনিই সবার চেয়ে এগিয়ে। তবে ইংল্যান্ড কোনও একজনের ওপর নির্ভর করছে না।সোনার বল পাওয়ার দাবিদার হিসেবে আবার ধরা হচ্ছে মদরিচকে। অর্থাৎ, দুই অধিনায়কই দুই দলের প্রাণভোমরা। দু’জনের ওপরই নির্ভর করছে দল। মদরিচ মাঝমাঠ থেকে কখনও কখনও হয়ে উঠছেন ফলস নাইন। গোলও করছেন। আর হ্যারি কেন তো আলো দিচ্ছেন গোলের মাধ্যমে।
ইংল্যান্ড দলে ভিড় তারুণ্যের। প্রত্যেকেই দ্রুত দৌড়ান। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট একসূত্রে বেঁধেছেন দলকে। আর এই দল হয়ে ওঠাই শক্তি ইংল্যান্ডের। ক্রোয়েশিয়া অবশ্য মোটেই সমীহ করছে না বিপক্ষকে। বলা হচ্ছে, ইংল্যান্ড যতই দুর্দান্ত দল হোক না কেন, যতই প্রতিশ্রুতিবান দল হোক না কেন, ক্রোয়েশিয়া তুলনায় অনেক ওজনদার।
অর্থাৎ, ইংল্যান্ড যতই ঐতিহ্যে ভরপুর হোক না কেন, ক্রোয়েশিয়া অতীত নিয়ে ভাবছে না। বরং ফাইনালকে পাখির চোখ করছেন মদরিচরা!