মাত্র তিন দিনের সফরে তিনি ব্রিটেনে এসেছেন। তার আগে থেকেই কোমর বেঁধে তৈরি অন্তত একলক্ষ প্রতিবাদী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে নিয়ে এয়ার ফোর্স ওয়ান বৃহস্পতিবার বিকেলে নামে ইংল্যান্ডের পূর্বে স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে। ব্রাসেলসে নেটো সম্মেলন সেরে ব্রিটেনে পা রাখলেন ট্রাম্প। তাঁর বিমান মাটি ছোঁয়ার অনেক আগে থেকেই এখানে প্রশাসনিক প্রস্তুতি তুঙ্গে।
একদিকে বিভিন্ন হোটেলে ট্রাম্প–সফরের জন্য ৭৫০টি ঘর বুক করে রাখা। দু’টি বিমান, ছ’টি হেলিকপ্টার এবং প্রেসিডেন্টের ‘বিস্ট’ তো রয়েছেই। বিক্ষোভকারীদের ‘আশ্বাস’, ট্রাম্প ব্রিটেনের যেখানেই যাবেন, সেখানেই তাঁদের দেখতে পাবেন। ট্রাম্পও স্বকীয়তা বজায় রেখে বলেছেন, প্রতিবাদ নিয়ে তাঁর কোনও ‘অসুবিধে’ নেই। তবে তিনি মনে করেন, ব্রিটেনের বাসিন্দারা তাঁকে পছন্দই করেন। ট্রাম্পের ধারণা, অভিবাসন প্রশ্নেও ব্রিটেনবাসী তাঁর সঙ্গে একমত! ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘অভিবাসন নিয়ে সারা বিশ্বে যা হচ্ছে… আমার মনে হয় ব্রেক্সিটও এই কারণেই ঘটেছে।’’
বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্সের সঙ্গে প্রথমে দেখা করার কথা ট্রাম্পের। তার পরে যাবেন রিজেন্টস পার্কে উইনফিল্ড হাউসের অনুষ্ঠানে, যেখানে থাকেন মার্কিন দূত। সন্ধে সাতটায় যাবেন অক্সফোর্ডের কাছে উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান ব্লেনিম প্যালেস–এ। সেখানে ১৫০ জন শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে তাঁর। উইনফিল্ড হাউসের সামনে থেকেই শোনা যাবে প্রতিবাদীদের স্বর। ১০, ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বিক্ষোভ দেখাবেন ‘টুগেদার এগেনস্ট ট্রাম্প’ নামে একটি গোষ্ঠী। পাশাপাশি ওই সময়েই বিক্ষোভ চলবে ব্লেনিম প্যালেস–এর বাইরে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে স্যান্ডহার্স্টে উড়ে যাবে হেলিকপ্টার। লন্ডন থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরের স্যান্ডহার্স্টে আছে ব্রিটিশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। সেখানে ট্রাম্পের সামনে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিশেষ শক্তি প্রদর্শন অনুষ্ঠান। লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ারের উপর দিয়ে তখন উড়বে ‘শিশু–ট্রাম্পের’ ২০ ফুট লম্বা বেলুন। ন্যাপি পরা রাগি ট্রাম্পকে দেখা যাবে বেলুনে। মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থী শিশুদের বাবা–মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে দেওয়ার যে নীতি নিয়েছিলেন ট্রাম্প, তার প্রতিবাদেই এই বেলুনের ভাবনা। ট্রাম্প ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি থেকে কিছুটা সরলেও ক্ষোভ কমেনি লন্ডনে।
ট্রাম্পের সফরের প্রতিবাদে আগামিকাল বেলা এগারোটা নাগাদ পোর্টল্যান্ড প্লেস থেকে পার্লামেন্ট স্কোয়ার পর্যন্ত হাঁটবেন দশ হাজার মহিলা। দুপুর দু’টো থেকে বিকেল চারটে নাগাদ সেখানে সমাবেশও হবে। ট্রাম্প সেই সময়ে উড়ে যাবেন চেকার্স–এ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে–র সপ্তাহান্তে সময় কাটানোর ঠিকানায়। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ সেরে টেরেসা–ট্রাম্প ফিরবেন লন্ডনে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে দুই নেতা–নেত্রীর সাংবাদিক বৈঠক। দুপুরেই পোর্টল্যান্ড প্লেস থেকে ট্রাফালগার স্কোয়্যার পর্যন্ত ট্রাম্প–বিরোধী মূল বিক্ষোভ, যার নাম ‘স্টপ ট্রাম্প।’ ট্রাফালগার স্কোয়্যারেও সমাবেশ হবে বিকেল ৫–৭টা। বিকেল পাঁচটায় কপ্টারে ট্রাম্প উড়ে যাবেন উইনসর কাস্লে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্কটল্যান্ডের দিকে রওনা হওয়ার কথা। রাত আটটায় পৌঁছনোর কথা গ্লাসগো বিমানবন্দরে। এখানকার জর্জ স্কোয়্যারেও ট্রাম্প–বিরোধী স্লোগান শোনা যাবে। স্কটল্যান্ডে ট্রাম্পের বিলাসবহুল টার্নবেরি হোটেলের গল্ফ কোর্সেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা। শনিবার সেখানেই ছুটি কাটানোর ইচ্ছে ট্রাম্প দম্পতির। তার মাঝে আরও মিছিল হওয়ার কথা এডিনবরা থেকে শুরু করে স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট পর্যন্ত। যা ছুঁয়ে যাবে এখানকার মার্কিন দূতাবাসকেও।