প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পুনরায় নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণ করবে।
তিনি বলেন, ‘যে ওয়াদা আপনাদের দিয়েছি নিশ্চয়ই তা পূরণ করবো। নিশ্চয়ই এদেশ উন্নত-সমৃদ্ধশালী হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনারা যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেন আর আওয়ামী লীগ যদি সরকারে আসতে পারে তাহলে প্রত্যেক গ্রামে প্রতিটি জনগোষ্ঠী নগরের সুবিধা পাবে এবং সুন্দরভবে বাঁচবে। প্রত্যেকটি গ্রামকে আমরা নগরে উন্নীত করবো-শহরে উন্নীত করবো।’
প্রধানমন্ত্রী আজ পাবনা পুলিশ লাইন্স মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে একথা বলেন।
বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি এসময় সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘আপনাদের দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না।’
তিনি বলেন, আমার জীবনে তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আজকে স্বজনহারা বেদনা নিয়েই আমি এসেছি শুধু আপনাদের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি। কারণ, আমার বাবা চাইতেন এদেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দর ভাবে বাঁচবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আমরা সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আগামী নির্বাচনে আপনারা যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেন আমরা আবারো ক্ষমতায় আসবো। আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাবো।
তিনি এসময় নৌকায় ভোট প্রদানের জন্য জনগণের অঙ্গীকার আহবান করলে উপস্থিত হাজার হাজার জনতা দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট প্রদানে তাদেও প্রতিশ্রুতির কথা জানান।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফের সভাপতিত্বে সমাবেশে, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ডা. দিপু মনি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দলের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বেলা সাড়ে ১১ টায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘রিঅ্যাক্টর বিল্ডিং (উৎপাদন কেন্দ্র)’ নির্মাণ কাজের দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধনের জন্য পাবনা আসেন। সমাবেশস্থল থেকেই তিনি পাবনাবাসীর জন্য ৪৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা আপনাদের জন্য এতগুলো উপহার নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়ন হয়েছে। কারণ নৌকা দেয়। নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ঈশ্বরদী থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেললাইন আবার চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন। সেই সঙ্গে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত ট্রেন চালুরও ঘোষণা দেন।
চার দলীয় জোট আমলের সঙ্গে তাঁর সরকারের শাসনামলের তুলনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ চায় জনগণের কল্যাণ, আওয়ামী লীগ চায় দেশের কল্যাণ। আমরা ক্ষমতায় এলে মানুষের কল্যাণে কাজ করি।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কাজই হলো লুটপাট, দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ।
বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘নিজেরা বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই, তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করেছে। ইঞ্জিনিয়ারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমাদের পুলিশকে রাস্তায় পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ৭০টা সরকারি অফিস পুড়িয়েছে, সাড়ে তিন হাজার বাস পুড়িয়েছে, ২৯টা রেল পুড়িয়েছে, ছয়টা ভূমি অফিস পুড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ করার জন্য এবার আমরা চার লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। এতোবড় বাজেট কোনোদিন কেউ দিতে পারেনি। বিএনপি সরকারের আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেট ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়ন বাজেট এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার।’
এ সময় জোট সরকারের আমলে পাবনায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের তালিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মানুষ হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। সারা বাংলাদেশে এই তান্ডব তারা সৃষ্টি করেছিল।
‘কই আমরা তো প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা পুরোটা সময় কাজে লাগিয়েছি দেশের মানুষের উন্নয়নে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো আমরা গ্রেফতার করিনি। কোর্টে রায় হয়েছে। এতিমের সম্পদ চুরি করলে সাজাতো হবেই।’
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার বিষয়ে কোরআন শরীফেও নিষেধ আছে। এতিমের জন্য আনা টাকা তারা এতিমদের দেয় নাই। নিজেরা আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষকে দিতে জানে।
মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে শেখ হাসিনা বলেন, মাদক একটা পরিবার-সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটা দেশ, একটা সমাজ, একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়।
সন্তানদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখার নির্দেশনা দিয়ে বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম সবার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই সর্তক থাকুন। সন্তান কোথায় যায়, কি করে, কার সঙ্গে মেশে খোঁজ রাখবেন। সবাইকে এক হয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
অভিভাবক-শিক্ষক-আলেম-ওলামা সমাজের সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ, কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবো না। মাথা উঁচু করে চলবো।
‘সাড়ে সাত কোটি মানুষকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’, জাতির পিতার ভাষণের এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে নাই, দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো।
গত জানুয়ারিতে প্রাক নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর এটি ছিল শেখ হাসিনার সপ্তম সমাবেশ। এর আগে তিনি সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে জনসভা করেন।