আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে পরাজিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি আজ দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের উদ্যোগে স্বাধীনতা রক্ষা এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের নির্মূলের লক্ষে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষের ডালপালা যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে তার মূলোৎপাটন করতে হলে দেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে আমরা পারব না কেন? আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে তারা আমাদের বার বার চ্যালেঞ্জ করবে।
কাদের আরো বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচতে হবে এবং দেশের উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সভাপতি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এমপি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ ও কবির আহমেদ খান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত কাদির গামা, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামুকার সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহ-সভাপতি মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান, বীরপ্রতীক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক মিয়া।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে কি হবে? ২০০১ সালের চেয়েও দেশে আরো বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হবে। তারা এক দিনের জন্য ক্ষমতায় এলে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, লাশের পাহাড় হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিএনপি আর ২০০১ সালের বিএনপি এক নয়। এবারের বিএনপি আগের বিএনপির চেয়ে ভয়াবহ এক বিএনপি। তারা আবার ক্ষমতায় এলে তারা আপনাদের বাড়ি ছাড়া করবে এবং দেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশে আর কখনো ২০০১ সালের মতো নীল নকশার নির্বাচন হবে না। বিএনপির সকাল দশটার মধ্যে ভোট গ্রহন সম্পন্ন করার স্বপ্ন আর কখনো বাস্তবায়িত হবে না।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের মতো আর যাতে কোন পাতানো নির্বাচন হতে না পারে, ২০১৪ সালের মতো কেউ যাতে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে না পারে সেজন্য সকল মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে আমরা সুসংহত করতে পারিনি বলেই আমাদের বার বার ছোবল খেতে হয়েছে। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সম্পন্ন করার কোন বিকল্প নেই।
পৃথিবীর কোন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজনীতি করতে পারে না উল্লেখ করে এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের শুধু বিচার নয়, তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাদের সন্তানরা যাতে সরকারি চাকরি না পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন এবং খালেদা জিয়া ওই শক্তিকে আরো হৃষ্টপুষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি রাজাকার, জঙ্গী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে রক্ষা করার জন্যই মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে থাকে। আসলে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, বিএনপি হচ্ছে একটি বিষবৃক্ষ, জঙ্গী তৈরির কারখানা ও সব রাজাকারের ঠিকানা। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের কখনো সহঅবস্থান হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, রাজনীতির মাঠ থেকে বিএনপি জামায়াতকে চিরতরে বিদায় জানাতে হবে এবং বিএনপি জামায়াতকে হালাল করতে যে ষড়যন্ত্র করছে তা বানচাল করতে হবে।
শাজাহান খান বলেন, সরকারের প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে জামায়াতসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের যে সন্তানরা ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। কারণ, তাদের কাছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিরাপদ নয়।
মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি সমাবেশে সারাদেশ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাবেক কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মুক্তিযোদ্ধারা অংশ গ্রহণ করেন।
সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
এরপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের ঘোষিত ছয়দফা কর্মসূচির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এ ছয়দফা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকুরিতে নিষিদ্ধ করা, যারা চাকরিতে রয়েছে তাদের বের করে দেওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষকারীদের বিচারের আওতায় আনা, বিএনপি-জামায়াতের চালানো নাশকতার বিচার ও কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চালানো নাশকতার বিচার।
এ দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য আগামী ১৯ জুলাই থেকে ২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত সভা সমাবেশ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, প্রতিনিধি সভা ও স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মূলোৎপাটনে মুক্তিযোদ্ধাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ওবায়দুল কাদের
ডেস্ক রিপোর্ট