৩১ দিনের জমজমাট নাটক শেষ। ৬২ ম্যাচের লাগাতার স্নায়ুর চাপ সামলে বাজিমাতের টেনশনেও দাঁড়ি। কারা থাকলেন, কারা বিদায় নিলেন, অবসান সেই তর্কেরও।
লুঝনিকি স্টেডিয়ামে কাপ–যুদ্ধের ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। যে ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে আবেগ আর ইতিহাস। থাকছে প্রতিশোধের একটা দিকও। মহাতারকারা কেউ নেই। এই ম্যাচ আসলে ধারাবাহিক থাকা দুই দলের।
ফুটবলপ্র্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আজ রাতের ফাইনালের জন্য। ফ্রান্স কি পারবে দ্বিতীয় বারের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে? হুগো লরিসের দলের সামনে ইতিহাস ছোঁয়ার হাতছানি। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বচ্যম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। সে বার অধিনায়ক ছিলেন দিদিয়ের দেশঁ। এ বার তিনি কোচ। এই পর্যায়ে কতটা চাপ থাকে, আর কী করতে হয় তা কাটিয়ে উঠতে জানেন।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপ নেই। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে এসে সেমিফাইনালে ওঠাই ছিল তাদের সেরা সাফল্য। রাশিয়ায় ফাইনালে উঠে যা এর মধ্যেই ছাপিয়ে গিয়েছেন লুকা মদরিচ, ইভান রাকিতিচরা। কাপ জিতলে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে ফুটবলবিশ্ব। সৃষ্টি হবে ইতিহাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের ফুটবল কেন্দ্র করে বাঁচার লড়াই পাবে অন্য মাত্রা। গোটা দেশ তাই ফুটবল–আবেগে কাঁপছে।
ফ্রান্সের ভরসা কিলিয়ান এমবাপে। ১৯ বছর বয়সি খেলছেন দুরন্ত ফুটবল। গোল করেছেন, স্কিলের ঝলকানিতে মুগ্ধও করেছেন। এমবাপের সঙ্গে গ্রিজম্যান আর জিহু মিলে আক্রমণ রীতিমতো তীক্ষ্ণ। মাঝমাঠে পল পোগবা আর কান্তে রয়েছেন। মাতুইদি ফিট হয়ে উঠেছেন। রক্ষণও জমাট। গোলরক্ষক লরিস অধিনায়কও। সব মিলিয়ে ফ্রান্স দলে দারুণ ভারসাম্য। চোট–আঘাতের উদ্বেগও নেই। ক্রোয়েশিয়াকে কিন্তু দুশ্চিন্তায় রাখছে পেরিসিচের চোট। নকআউটে টানা তিন ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে খেলাও ক্লান্তি আনতে বাধ্য। যা ফ্রান্সের নেই।
ফাইনালে আবার প্রতিশোধের কাহিনিও রয়েছে। কুড়ি বছর আগে দাভর সুকেররা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরেছিলেন ফ্রান্সের কাছে। ফ্রান্স হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। এ বার কি ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হবেন সুকেরের উত্তরসূরিরা? নাকি, ইতিহাসের হবে পুনরাবৃত্তি, বিশ্বকাপে ফের ফ্রান্স হারাবে ক্রোয়েশিয়াকে?আবেগ, প্রতিশোধ, ইতিহাস। বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রেক্ষাপট জমজমাট।
এর সঙ্গে মাঠের লড়াইও বেশ উত্তেজক। দুই গোলরক্ষক সুবাসিচ ও লরিসের একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। মাঝমাঠে পোগবা–কান্তের সঙ্গে মদরিচ–রাকিতিচের বল দখলের লড়াই। এমবাপের সঙ্গে আবার সোনার বলের লড়াইয়ে রয়েছেন মদরিচ।
বিশ্বকাপ ফাইনাল মানেই নায়ক হওয়ার মঞ্চ। মঞ্চ নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ারও। বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি চোখ যে তাকিয়ে থাকবে ও দিকেই। কাপ–যুদ্ধ কোথাও গিয়ে তাই হয়ে উঠছে মানসিক শক্তির পরীক্ষাও।