বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দলীয় নেতৃত্ব ও নির্বাচন থেকে সরাতে সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধনের পায়তারা করছে বলে আশংকা বিএনপির। রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আশংকার কথা জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- বিএনপি গঠনতন্ত্রের যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেবে তারা।
বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্যই কি আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে বলে মনে করেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেই আশংকাই তো আমরা করছি। বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে সংসদে গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য উদ্ভট, অলীক ও অন্তঃসারশূন্য। শুধুমাত্র প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য ও বানোয়াট অপপ্রচার। আমরা মনে করি, এই বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের দ্বারা সংশোধিত। যা পরবর্তিতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। আমাদের দলের দুর্নীতিবিরুদ্ধ অবস্থান স্পষ্টতর করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্যপদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না’- এই বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানা মতে, কোনো দলের গঠনতন্ত্রের সদস্যপদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেওয়ার বিধান নেই।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নোংরা-অনৈতিক পথে হাঁটবেন না, সোজা পথে হাঁটুন। সোজা পথে হেঁটে গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য জনগণ এবং আমরা যে সংগ্রাম করে আসছি-সেই সংগ্রামে শরিক হোন। দলের গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও অলীক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিলো, সেই একই কায়দায় এখন পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। সরকারের উচিত হবে এসব নোংরা কৌশল থেকে বিরত হয়ে সোজা পথে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল মঈন খান, রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, শামসুজ্জামান সুরুজ, আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল খালেক প্রমুখ।