সমসাময়িক সমুদ্রের ছায়া
ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে বসন্তের মেঘ। যে আকাশে এখন উড়ছে আহত পাখি,
সে আকাশের ছায়ায় একদিন আমরাও হয়েছিলাম বিলীন। আর বলেছিলাম,
চলো, একসাথেই পাঠ করি সুলিখিত রোপণবিদ্যা।
বপণের বৈভব লালন করতে পারে না সকল প্রাণ। যারা পারে, তারা বীজ
বপণের পর স্পর্শ করে ঝুরো মাটি। তারপর ক’ফোটা জল ছিটিয়ে দিয়ে
অস্ফূট কন্ঠে বলে- জয়ী হোক বীজের উত্থান।
আমি সেই উত্থানের ছায়ায় খুঁজেছি, তোমার বুকের সমসাময়িক সমুদ্র।
যে রেখা প্রতিদিন আমার চোখে অসংখ্য ধ্যানবিন্দু এঁকে যায়, সে রেখায়
মিশিয়েছি তোমার দু’টি হাতের ছাপ।এবং উষ্ণতা ছুঁয়ে বলেছি, মেঘ
সরে যায়, যাক। এসো উত্তাপের আলোয় লুকিয়ে রাখবো খণ্ড খণ্ড প্রেমসূর্য।
ঘুম ঘুম চোখগুলো
ঘুম ঘুম চোখগুলো দেখলেই শুধু মনে হয়; তবে কী এই দেশে মানুষেরা
ভুলে গেছে জাগার প্রার্থনা। তবে কী এই দেশে নির্বাসিত বঙ্গপোসাগর।
জোয়ারের ধ্বনিগুলো এখন আর প্রাণের বিবেকে; আনে না উজ্জ্বল আঘাত-
মানুষের পাশে দাঁড়াবার। অথবা ডাক দিয়ে বলে না কেউ, বন্ধ হোক
কৃত্রিম প্রলয়। আর যারা বাণী দেয়, থেতলে যাওয়া লাশ নিয়ে পাশে।
কিংবা মিছিল করে, দিয়ে যায় রক্তের দোহাই। তাদের গর্জন শোনে
বনবাসী শিয়ালেরা হাসে। এদের হাতেই আজ মানুষের ভাগ্য-রাজত্ব।
কীভাবে বাঁচবে মানুষ- যে দেশে অবরুদ্ধ পথ। পালাবার জায়গা নেই,
এ কেমন স্বাধীন স্বদেশ!ঘুম ঘুম চোখে কেবল জমা হচ্ছে অন্ধত্বের রেশ।
গোলকীপার
গোল হয়ে বসে থাকে দুপুরের দুঃখ। কেউ দেখতে আসেনি আজ,-সেই
বেদনায় মাথা নত করে থাকে অভিমানী মাঘের মেয়ে। এই বসন্ত
এর আগেও কারারুদ্ধ ছিল।এই শীতের শেষে,মাটিচিহ্নে পড়েছিল অগোছালো
পুষ্পের ছায়া।
রুদ্ধশ্বাসে উড়ে যাচ্ছে মেঘের গোলন্দাজ বাহিনী। কোনো যুদ্ধ নয়, তবুও
দেশ ছেড়ে অন্যদেশে দখলের পতাকা উড়াচ্ছে বিচ্ছেদের নবম সারিন্দা।
বিরহের জয় হোক। প্রাণজ আনন্দে বেদনার সারিন্দা বাজুক, কথাগুলো
আবারও লিখছেন প্রাক্তন বিভাগীয় সম্পাদক।
আমি গোললকীপার হয়ে, হাঁটু গেড়ে বসে আছি।সবগুলো গোল আটকাবোই।
আমাদের পরাজয় ঠেকাতে, আজ মধ্যরাতেই করবো বিকল্প চন্দ্রের সন্ধান।
গ্রহানুগতিক
সংরক্ষণ করে রাখি ঝড়ের তৃণমূল। সকল বিশ্বাস এখনও উড়ে
যায়নি জেনে, সচল দুপুরের প্রতি খাটাই প্রভাব।আমার প্রতিপত্তি
দেখে যে ভোর কেঁপেছিল, সেও জানে- তুমি পঠনে অভ্যস্ত নও।
যদি হতে পারতে সফল লোকশিল্প পাঠিকা, তবে অনায়াসে জেনে
নিতে পারতে দৈহিক দৃষ্টির বিসর্জন। আমি আজীবন, বিসর্জন
সাধনা করেছি।আর গ্রহানুগতিক সৌরযজ্ঞ সেরে ভালোবাসাকেই
দেখিয়েছি সর্বশেষ বিনয়। জানি, প্রেম একদিন জলের পূর্ণসত্তাকে
স্পর্শ করবে। আর বৃষ্টিই সাজিয়ে দেবে তোমার সব’কটি প্রশ্নের
উত্তর, -মাতাল সমুদ্রের তাৎপর্যময় কাঠামো।
বীজ ও বর্তমান
অসমাপ্ত ছায়া রেখে বিদায় নিল চাঁদের গ্রহণ
আমি যে রাতকে আলিঙ্গন করবো বলে
এসেছিলাম নদীকূলে,
সেই নদীও আমাকে দেখালো একান্ত ভাটিতন্ত্র
একা হয়ে যাবার আগে
আমি সবিনয়ে পরখ করতে চাইলাম
আমার পদছাপ।
এই পথে হেঁটেছে এর আগেও কেউ।
এই বীজপত্রে লেগে আছে যে বৃষ্টির ফোঁটা- তা দেখে
আমি ইতিহাসকন্যার কাছে,
জাতে চাইলাম রক্ত ও রঙের
পার্থক্য। জানতে চাইলাম- আমার পূর্ববর্তী
পথিকেরা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে।
আমার সদ্যপ্রেমিকা ইতিহাসকন্যা মুখ ফিরিয়ে নিল।
বললো-
‘তুমি পঠনের পরিণাম জানো না,
চেনো না ঘটনা অতিক্রম করার অবিকল্প পথ।
যদি জানতে-
তবে চন্দ্রবীজেই খুঁজে নিতে পারতে
তোমার বর্তমান ঠিকানা।’
আমি অসহায়ের মতো আর্তনাদকেই-
লুকিয়ে রাখতে চাইলাম পাঁজরের অবিকল প্রচ্ছদে।