গত ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সৈয়দ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়৷ সোমবার কমিশনের তৃতীয় বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতা শামছুন্নাহার ভূঁইয়া ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেন৷ আর তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা৷ ফলে মজুরি নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি৷ এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়৷
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সভাপতি সিরজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘‘আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ যিনি শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে ১২ হাজার ২০ টাকা মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা-ও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না৷ কারণ, তিনি সরকারের লোক৷ আর শ্রমিক নেতা হিসেবে তিনি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন৷ আর মালিকরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, সেটা হাস্যকর৷ কারণ, পাঁচ বছর আগে যে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি করা হয়েছিল, শ্রমিকরা এখন তার চেয়ে বেশি পান৷ কারণ, ইনক্রিমেন্ট হয়েছে, যেটা মালিকরা প্রস্তাব করেছেন, সেই মজুরি এখন বাস্তব মজুরির চেয়ে কম৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মালিকদের এই একগুঁয়েমি ভাব নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক করেছি৷ প্রথম বৈঠকের পর থেকে ৬ মাসের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে হবে৷
সেই হিসেবে আরো কিছু সময় পাবে কমিশন৷ আমাদের আশা এর মধ্যে মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা হবে৷ আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী৷ আমরা মনে করি, তিনি মজুরির ব্যাপারের সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আরো দুই সপ্তাহ সময় আছে৷ এরমধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে৷ মালিকপক্ষ এখন সময় চেয়ে কালক্ষেপনের পথ বেছে নিতে পারে৷ তাঁরা যদি সেরকম কিছু করেন, তাহলে শ্রমিকরা তা মেনে নেবেন না৷”
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘‘মালিকরা যে মজুরির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শ্রমিকদের একটা বিক্ষোভের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে৷ আজও আমরা সমাবেশ করেছি৷ আমরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সমাবেশ করবো৷”
তিনি বলেন, ‘‘মালিকদের মানসিকতা হয়েছে, তারা যেন বেতনই দিতে চান না৷ আমরা বলেছি, গার্মেন্টস মালিকরা যেন বিলাসিতা কমিয়ে দেন৷ তাঁরা যেন মানসিকতার পরিবর্তন করেন৷ আমরা সবাই মিলে ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছিলাম৷ আর সেটাই যৌক্তিক৷
তারপরও শ্রমিক প্রতিনিধি যে ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব করেছেন, তিনি সরকারের লোক৷ তা-ও মালিকরা মানছেন না৷”
বিজিএমই’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, ‘‘আমরা মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খরচ এবং বিশ্বে তৈরি পোশাকের দাম ও চাহিদা বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব করেছি৷ আমাদের উৎপাদনসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে৷ এর বেশি মজুরি দিলে পোশাক কারখানা চালানো সম্ভব নয়৷ বন্ধ হয়ে যাবে৷ আর তাতে সবার ক্ষতি হবে৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘যাঁদের জন্য ন্যূনতম মজুরির কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা শিক্ষানবিশ৷ তাঁরা কাজ শেখে৷ পরে তাঁদের বেতন বেড়ে যায়৷ শিক্ষানবিশকে এর চেয়ে কে বেশি বেতন দেবে? শিক্ষানবিশরা ইনক্রিমেন্ট পান না৷ যাঁরা বলেন ইনক্রিমেন্ট পেয়ে ৫ বছরে তাঁদের বেতন এখন আমাদের প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে বেশি, তাঁরা না জেনেই কথা বলছেন৷”
মজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘‘২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা৷ প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্টের বিধান ছিল৷ তাতে ইনক্রিমেন্টসহ পাঁচ বছরে যে ন্যূনতম মজুরি হয়েছে তা এখন মালিকরা যে প্রস্তাব করেছেন তার চেয়ে বেশি৷ তাঁরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না৷”
তিনি বলেন, ‘‘আমার বিবেচনায়, বাজারদর, জীবনমান সবকিছু মিলিয়ে নূন্যতম মজুরি ১২ হাজার টাকাই হওয়া উচিত৷ কারণ, মজুরি হিসাব করা হয় পাঁচ জনের একটি পরিবারের কথা মাথায় রেখে৷”
সূত্র : ডয়চে ভেলে