ন’দিনের অন্ধকার ঠেলে বেরিয়ে এসে শেষমেশ নতুন জন্ম পেয়েছে থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবল দল ‘ওয়াইল্ড বোর’। তা-ও এত দিন নানা বিধিনিষেধের মধ্যে কাটাতে হয়েছে ১২ খুদে ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচকে।
দলের কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছে নিউমোনিয়ায়। বাকিরা অল্পবিস্তর ঠান্ডা লাগা, জ্বর-সর্দিতে ভুগছে। এত দিন চিয়াং রাই হাসপাতালে কড়া পাহারায় রাখা হয়েছিল তাদের। ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল আরও এক দিন পরে। তবে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখে একদিন আগেই মিলেছে ছুটি।
আর ছাড়া পেয়েই বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হল ‘ওয়াইল্ড বোর’ দল। তবে দেখে কে বলবে, এতগুলো দিন কী ভয়ঙ্কর স্নায়ুর যুদ্ধ জিতে ফিরেছে ওরা!
সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের নিজের আসন দখল করার আগে ছোট্ট করে নিজেদের মধ্যেই ওরা একটু ফুটবল খেলে নিল। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই দর্শকাসন থেকে ছুটে এল একের পর এক প্রশ্ন। একটুও না ঘাবড়ে দিব্যি হাসি হাসি মুখে সব প্রশ্নের জবাব দিল তারা। উঠে এল অন্ধকার ন’দিনের নানা গল্প। তবে দলের বছর চোদ্দোর ফুটবলার আদুল সাম-অনের মতো গোটা দলই বিশ্বাস করে— ‘এই বেঁচে ফেরা সত্যিই অকল্পনীয়’।
কোচ এক্কাপল জানালেন, উদ্ধারকারী দল গুহার ভিতরে তাদের খুঁজে পাবে, প্রথম দিকে এমন আশা ছিল না। তাই গুহার ভিতরে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দেয় তারা। দলের আর এক খুদে জানাল, পাথর থেকে চুঁইয়ে নামা জলটুকুই ছিল একমাত্র পানীয়। ন’দিন পরে ব্রিটিশ ডুবুরি দল তাদের খোঁজ পায়। তার পরেই মেলে খাবার, জল।
তবে সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের দিকে ছুটে আসা প্রশ্নের দিকেও নজর রেখেছিলেন চিকিৎসক ও মনোবিদেরা। দর্শকাসন থেকে ওঠা প্রশ্ন মনোবিদদের হাত ঘুরে তবেই এ দিন পৌঁছেছে খুদেদের কাছে। প্রায় দু’সপ্তাহ উত্তর থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং ন্যাং নন গুহায় অন্ধকারে কেটেছে তাদের। সামনে এক গলা জল, তারই পাশে পাথরের উপরে টানা ন’দিন-ন’রাত। দিনক্ষণের হিসাবের বাইরে অদ্ভুত এক অন্ধকার দুনিয়া। ফলে এই মুহূর্তে যে কোনও অহেতুক প্রশ্ন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। থাইল্যান্ডের জুন্টা নেতা প্রয়ুত চ্যান-ও-চ্যা সংবাদমাধ্যমকে আগেই এ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
এত দিন পর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে। তাই উৎসবের মেজাজ খুদেদের বাড়িতেও। বছর তেরোর দমের দিদা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, ‘‘আমার জীবনের সব চেয়ে খুশির দিন আজ।’’ তবে বাড়ি ফেরার পরেও অন্তত এক মাস খুদে ফুটবলাররা যাতে কোনও সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হয়, সে ব্যাপারে তাদের পরিবারকে সতর্ক করেছেন মনোবিদেরা।
এ দিকে, নিজের মন্তব্যের জন্য এ দিন ব্রিটিশ উদ্ধারকারী দলের প্রধান ডুবুরি ভার্নন আনসওয়ার্থের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন শিল্পপতি তথা ইঞ্জিনিয়ার এলন মাস্ক। থাম লুয়াং গুহায় উদ্ধারকাজ চলাকালীন নিজের খুদে ডুবোডাহাজ নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান মাস্ক। তবে আনসওয়ার্থ জানিয়ে দেন, মাস্কের ডুবোজাহাজ আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। ফলে তা উদ্ধারে কাজে লাগবে না। আর তাতেই রেগে যান মাস্ক।
পরে টুইটারে নাম না করে আনসওয়ার্থকে ‘শিশু যৌন নিগ্রহকারী’ বলেও আখ্যা দেন তিনি। পরে সে টুইটটি উড়িয়ে দিলেও মাস্কের বক্তব্য শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। এ দিন সে প্রসঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে মাস্ক বলেন, ওনার কথার উত্তরে আমি যা বলেছি তা কখনই যুক্তসঙ্গত নয়। আর তার জন্য আমি আনসওয়ার্থের কাছে তো বটেই, আমার সংস্থার কাছেও ক্ষমা চাইছি।’’