ফিক্সিং সন্দেহে আতসকাঁচের নিচে চার অধিনায়ক৷ আইসিসি’র বার্ষিক রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে৷ ১ জুন, ২০১৭ থেকে ৩১ মে, ২০১৮ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশানাল ক্রিকেট কাউন্সিল ১৮টি তদন্ত চালিয়েছে৷ সেই তদন্তের মধ্যে চারটি ক্ষেত্র নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আইসিসি’র দুর্নীতিদমন শাখা৷
ক্রিকেটবিশ্বের আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ঘরোয়া ও কর্পোরেট টি-২০ লিগ কতটা দূনীতি মুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘটা সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর আজমন অলস্টার লিগের ঘটনা৷ এরপরই নড়ে চড়ে বসে আইসিসি৷
সম্প্রতি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে আইসিসি৷ সেজন্যই শেষ এক বছরের কিছু বেশি সময়ে ১৮টি তদন্ত চালিয়ে গিয়েছে আইসিসি’র দুর্নীতি দমন শাখা৷ যার মধ্যে ১৩টি ক্ষেত্রে এখনও তদন্ত চলছে৷ এর মধ্যে দুটি মিডিয়ার স্টিং অপারেশনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে৷ আর চারটি ক্ষেত্রে আন্তজার্তিক ক্রিকেট দলের চার অধিনায়কের জড়িয়ে থাকা নিয়ে তদন্ত চলছে৷’
ক্রিকেটে স্পট ফিক্সিং, ম্যাচ গড়াপেটা ও মাঠের বাইরে বেটিংচক্রের হদিশ হামেশাই মেলে৷ তবে সেটা চলে পর্দার আড়ালে৷ সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়া কোনও টুর্নামেন্টে গোটা দলকে প্রকাশ্যে ম্যাচ ছেড়ে দিতে দেখা গেলে বিষয়টা কতটা গুরুতর, তা আন্দাজ করা যায় আমীরশাহীর আজমন অলস্টার লিগের লিগের একটি ম্যাচে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় দুবাইয়ের ১৩৬ রান তাড়া করতে নেমে শারজা ওয়ারিয়র্সের বেশিরভাগ ক্রিকেটার স্বেচ্ছায় রানআউট হন অথবা হাস্যকরভাবে স্ট্যাম্প আউট হয়ে ক্রিজ ছাড়েন৷ উইকেটকিপার বল ধরতে না পারলেও ব্যাটসম্যানকে ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আউট হওয়ার অপেক্ষায়৷ রানআউটগুলিও অত্যন্ত উদ্ভট৷ দুই ব্যাটসম্যানই ক্রিজের মাঝপথে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এবং ফিল্ডার ধীরে সুস্থে বল ধরে উইকেটকিপারের হাতে ছুঁড়ে দিচ্ছেন রান আউট করার জন্য, এমন ছবি বার বার দেখা গিয়েছিল ম্যাচে৷
ম্যাচের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্য আসার পরেই আইসিসি-র দূর্নীতি দমন শাখা তদন্ত শুরু করে টুর্নামেন্টটি দু’দিনের মধ্যে বন্ধ করে দেয়৷ শুধু এই লিগটিই নয়, আজমন ওভালে কোনও রকম ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের উপর নিষধাজ্ঞা জারি করা হয়৷ সেই ঘটনাই আইসিসি চোখ খুলে দিয়েছিল বলা চলে৷
ইতিমধ্যেই ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের ক্রিকেট কেলেঙ্কারিতে না জড়ানোর বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার কাজ চলছে আইসিসি৷ তার মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করার কাজ চলছে৷ ক্রিকেট সংস্থার এক রিপোর্টে উঠে এসেছে ২০১৭-১৮ সময়কালের মধ্যে ১২টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ১৪৬৮ জন ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ ও ম্যাচ অফিশিয়ালদের এবিষয়ে শিক্ষা দিয়েছে আইসিসি৷
অন্যদিকে চলতি মাসে সর্বসম্মতিক্রমে আইসিসির কোড অফ কন্ডাক্টে বদল আনা হয়েছে৷ আচরণবিধি ভঙ্গে শাস্তি আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল৷ বিশেষ করে বল বিকৃতির অপরাধে দোষীকে আগের থেকে ছ’গুন বেশি শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া নেওয়া হয়েছে আইসিসি’র বার্ষিক সম্মেলনে৷
এতদিন বল বিকৃতি আইসিসির ‘লেভেল-টু’ পর্যায়ের অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হত৷ যার শাস্তি ছিল একটি টেস্ট বা দু’টি একদিনের ম্যাচে নির্বাসন৷ এবার থেকে বল বিকৃতিকে লেভেল-থ্রি পর্যায়ের অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে৷ যার নূন্যতম শাস্তি হবে ৬টি টেস্ট বা ১২টি ওয়ান ডে থেকে নির্বাসন৷ বল বিকৃতি নিয়ে কড়া হওয়ার পাশাপাশি এবার ক্রিকেটকে কলঙ্গমুক্ত করতে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে দেখা যেতে পারে আইসিসিকে৷