সন্ত্রাস ছেড়ে মূল স্রোতে ফেরার চেষ্টা। নাকি অতীত জঙ্গি কার্যকলাপের শাস্তি থেকে বাঁচতে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচের সন্ধান। উদ্দেশ্য যাই হোক, হাফিজ সাঈদকে কিন্তু খালি হাতেই ফেরাল পাক আমজনতা। পাকিস্তানের ভোটে একটিও আসন দখল করা দূরে থাক, সাঈদের দলের কোনও প্রার্থীর কোথাও এগিয়ে থাকার খবরও নেই। অথচ ন্যাশনাল ও প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলি মিলিয়ে ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আল্লাহ-উ-আকবর তেহরিক (এএটি)।
শুধু পাকিস্তানবাসীই নয়, ভোটের আগে সাঈদকে ধাক্কা খেতে হয়েছে পাক নির্বাচন কমিশনেও। তার মূল দল মিল্লি মুসলিম লিগকে স্বীকৃতিই দেয়নি কমিশন। তবে এএটি নামে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ওই দলের ব্যানারেই ভোটে অংশগ্রহণ করেন হাফিজ সাঈদ ও তার অনুগামীরা। আশা ছিল, বালুচিস্তান, পেশাওয়ার, নৌসেরা, সোয়াট-এর মতো গোঁড়া ধর্মাবলম্বী মানুষের বসতি এলাকায় দু’-চারটি আসন পেলেও খুলে যাবে পাক সংসদের দরজা। কিন্তু নিরাশ করেছেন পাক ভোটাররা।
হাফিজ নিজে প্রার্থী হতে পারেননি। কিন্তু তার দল এএটি ২৬৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ৮০ এবং প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলিতে ১৮৫। কিন্তু কোনও প্রার্থীই জয় পাওয়ার মতো জায়গায় যাওয়া দূরে থাক, গোটা গণনা পর্বে এগিয়ে রয়েছেন বলেও খবরও আসেনি। কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে এএটি।
ভোটের আগেও অবশ্য তেমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি মুম্বই হামলার চক্রীর দলের প্রার্থীদের। গোটা ভোটপর্ব কার্যত ব্যানার, পোস্টারেই সীমাবদ্ধ ছিল দলের প্রচার। ছোটখাটো দু’-একটি নির্বাচনী সভা হলেও তাতে লোক সমাগম ছিল হাতে গোনা। ভোট বিশ্লেষকরা তখন থেকেই আঁচ করেছিলেন, এই ফলাফলের। শুধু সাঈদই নন, খাদিম রিজভির তেহরিক লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) বা মুত্তাহিদা মজলিস আমল (এমএমএ)-এর মতো সাম্প্রদায়িক দলগুলির থেকেও মুখ ফিরিয়েছেন ভোটাররা।
মুম্বইয়ে ২৬/১১ জঙ্গি হানার মাস্টারমাইন্ড এই হাফিজ সাঈদ। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া-র প্রধানকে ধরতে এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ভারতের এনআইএ-র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে হাফিজের নাম। সারা বিশ্বেই এই জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতারের দাবি উঠেছে। কিন্তু পাকিস্তান সে-সবে কান দেয়নি কোনওদিনই। তাঁকে গৃহবন্দি করলেও তাতে হাফিজের কার্যকলাপ থেমে থাকেনি। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে এ হেন জঙ্গি নেতার ভরাডুবিতে আন্তর্জাতিক মহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।