শিমরোন হেটমায়ারের সেঞ্চুরিতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৩ রানে হারালো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা আনলো ক্যারিবীয়রা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৮ রানে জিতেছিলো সফরকারী বাংলাদেশ।
গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাটিং-এ নেমে সর্তকার সাথে এগোতে থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। তবে এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৮ বলে ১২ রান করা এভিন লুইসকে আউট করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মাশরাফি।
লুইসের মত বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার গেইলও। অবশ্য এ ম্যাচে ভালো কিছু করার ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তিনি। ৩৮ বল মোকাবেলায় ৩টি চার ও ১ ছক্কায় ২৯ রানে অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হন গেইল।
পঞ্চম বোলার হিসেবে আক্রমনে এসেই উইকেট তুলেন নেন প্রথম ম্যাচে উইকেট শিকার করতে না পারা সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে শাই হোপকে থামান সাকিব। ৪৩ বলে ২৫ রান করেন হোপ। দলীয় ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের ২৪তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে চতুর্থবারের মত আঘাত হানেন বাংলাদেশ পেসার রুবেল হোসেন। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ১২ রান করা জেসন মোহাম্মদ রুবেলের প্রথম শিকারে পরিত হন। স্বাগতিক দলের স্কোর দাঁড়ায় ১০২ রানে ৪ উইকেট।
এ অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাল ধরেন হেটমায়ার ও রোভম্যান পাওয়েল। শক্ত হাতে হাল ধরে দলকে সামনের দিকে টেনে নেন এ জুটি। তাদের ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে ২শ রানের কোটা স্পর্শ করে ক্যারিবীয়রা। এরপরই বিচ্ছিন্ন হন পাওয়েল। ৪টি চারে ৬৭ বলে ৪৪ রান করে রুবেলের দ্বিতীয় শিকার হন পাওয়েল। ভেঙ্গে যায় হেটমায়ার-পাওয়েলের ১১০ বলে ১০৩ রানের জুটি।
পাওয়েলের আউটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোন ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে এক প্রান্ত আগলে দলের রান ঠিকই বড় করছিলেন হেটমায়ার। ফলে ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম ম্যাচেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন হেটমায়ার। চলতি বছরের মার্চে হারারেতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি তুলেছিলেন হেটমায়ার। সেঞ্চুরি তুলে রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেন তিনি। ৯৩ বলের ইনিংসে ১২৫ রান করে রান আউট হবার আগে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান হেটমায়ার। তারপরও ৩ বল বাকী থাকতে ২৭১ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের পক্ষে রুবেল ৬১ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর-সাকিব ২টি করে এবং মাশরাফি-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালই করে বাংলাদেশ। ২টি করে চার-ছক্কায় দ্রুত তোলার ইঙ্গিত দেন গেল ম্যাচে রানে আউট হওয়া ওপেনার এনামুল হক বিজয়। কিন্তু এবারও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ তিনি। ৯ বলে ২৩ রান করে বিজয় আউট হলে প্রথম উইকেট হারায় টাইগাররা।
দলীয় ৩২ রানে বিজয় ফিরে যাবার পর উইকেটে জুটি বাঁেধন আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাকিব। গেল ম্যাচের মত দেখেশুনে এগোতে থাকেন তারা। তামিম-সাকিবের দৃঢ়তায় ১৫তম ওভারেই শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত দলীয় ১২৯ রানে বিচ্ছিন্ন তামিম-সাকিব। জুটিতে ১৩৫ বলে ৯৭ রান যোগ করেন তারা। ফিরে যাবার আগে নামের পাশে ৫৪ রান রেখে যান আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তামিম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪২তম হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসে ৮৫ বল মোকাবেলায় ৫টি বাউন্ডারি হাকান তিনি।
তামিমের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর ফিরতে হয় সাকিবকেও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৯তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৫৬ রানে থামেন সাকিব। ৭২ বল মোকাবেলা করে ৫টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজান আগের ম্যাচে ৯৭ রান করা সাকিব।
দলীয় ১৪৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর কিছুটা বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশকে চিন্তা মুক্ত করেন মিডল-অর্ডারে দুই ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন তারা। তাদের জুটির কল্যানে ভালভাবেই ম্যাচে টিকে থাকে বাংলাদেশ।
ইনিংসের ৪৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ৩ উইকেটে ২৩২ রানে। এসময় জয়ের জন্য ৩০ বলে ৪০ রান দরকার পড়ে টাইগারদের। উইকেটে ছিলেন মুশফিক ৪৮ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৩৯ রানে। এ অবস্থায় ম্যাচে জয়ের দারুন সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের।
কিন্তু ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিকের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন মাহমুুদুল্লাহ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা ৯৫ বলে ৮৭ রান এনে দেন। যার মধ্যে মাহমুদুল্লাহর অবদান ২টি ছক্কায় ৫১ বলে ৩৯ রান।
মাহমুদুল্লাহ ফিরে যাবার পর উইকেটে মুশফিকুরের সঙ্গী হন সাব্বির রহমান। দু’জনে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন। ফলে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের সমীকরন গিয়ে দাড়ায় ১২ বলে ১৪ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারের শেষ বলে থামতে হয় সাব্বিরকে। ১টি চারে ১১ বলে ১২ রান করেন তিনি। এতে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় মুশফিকের কাঁেধ।
শেষ ওভারে ৮ রানের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর দায়িত্ব পান মুশফিকুর। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডারের করা ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মুশি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৭ বলে দলের সর্বোচ্চ ৬৮ রান করে মুশফিক আউট হলে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।
বাকী পাঁচ বল থেকে মাত্র ৪ রান নিয়ে পারেন বাংলাদেশের দু’ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ও অধিনায়ক মাশরাফি। অবশ্য ইনিংসের শেষ পাঁচ বলের চারটিই খেলেছেন মোসাদ্দেক। রান নিতে পারেন মাত্র ৩। ইনিংসের শেষ বলে জিততে ৫ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু মাশরাফি ১ রান নিতে পারেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৬৮ রান করতে পারে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোসেফ- হোল্ডার-নার্স-পল ও বিশু ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেটমায়ার।
আগামী শনিবার জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাসেটেরেতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৭১/১০, ৪৯.৩ ওভার (হেটমায়ার ১২৫, পাওয়েল ৪৪, রুবেল ৩/৬১)।
বাংলাদেশ : ২৬৮/৬, ৫০ ওভার (মুশফিকুর ৬৮, সাকিব ৫৬, তামিম ৫৪, নার্স ১/৩৪)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যাচ সেরা : শিমরোন হেটমায়ার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
খেলা