নাটোরের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত মাছ যাচ্ছে সারাদেশে

ডেস্ক রিপোর্ট

জেলায় মাছের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে মৎস্য বিভাগের সাথে মৎস্য চাষীদের তৈরি হয়েছে মেলবন্ধন, বেড়েছে সচেতনতা, বেড়েছে উৎপাদন। শস্য ভান্ডারের মত নাটোর পরিচিতি পাচ্ছে মৎস্য ভান্ডার হিসেবেও। জেলার উদ্বৃত্ত মাছ যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের ঘাটতি এলাকাগুলোতে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১-২০১২ সালে জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ছিলো ৩৩ হাজার ৮৮৬ টন। এর পরবর্তী চার বছরে উৎপাদনের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে হয়েছিল যথাক্রমে ৩৭ হাজার ৬৫৬ টন, ৩৮ হাজার ২৭৫ টন, ৩৯ হাজার ১০৪ টন এবং ৪০ হাজার ৫২১ টন। বিগত ২০১৬-২০১৭ বছরে উৎপাদন আরো বেড়ে হয় ৪২ হাজার ৫৪৭ টন। আর সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-২০১৮ বছরে মাছের উৎপাদন সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় ৫১ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।
জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসেবে জেলায় বাৎসরিক মাছের মোট চাহিদা ৩৭ হাজার ৩৭৬ টন। এর বিপরীতে ৫০ হাজার ৯৯৭ টন উৎপাদনের ফলে উদ্বৃত্ত থাকছে ১৩ হাজার ৬২১ টন। উদ্বৃত্ত এই মাছ যাচ্ছে দেশের ঘাটতি এলাকার চাহিদা পূরণের জন্যে। বিশেষ করে চলনবিল এবং হালতি বিলের দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ সারাদেশেই আদরনীয়। প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই মাছ ঢাকাসহ যাচ্ছে সারাদেশে।
জেলার চার হাজার ৭২২ হেক্টর নদী এবং দুই হাজার ২৪৪ হেক্টর বিল এলাকা দেশীয় রকমারী প্রজাতির মাছের মূল উৎস। এর বাইরে সাত হাজার ৭১২ হেক্টর পুকুর ও দীঘি এবং ২০২ হেক্টর খাল এলাকায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার হেক্টরের মৌসুমী প্লাবন ভূমি।
৮০’র দশকে ভারত থেকে সংগ্রহ করে দেশের মধ্যে প্রথম ব্রিগেট কার্প মাছ চাষের প্রচলন করেছিলেন মৎস্য চাষে বিভাগীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মৎস্য চাষী আলফাজ হোসেন। তথ্যের প্রসারের ফলে মৎস্য চাষীদের মাছ চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। দ্রুত বর্ধনশীল মাছ চাষ, মাছকে অল্প সময়ে বড় করা, পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি কারণে নাটোরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে মত প্রকাশ করেন এই মৎস্য চাষী।
নাটোরের আদর্শ মৎস্য চাষী গোলাম নবী জানান, মাছ চাষের সকল কার্যক্রম এখন খুবই সুপরিকল্পিত। গুণগত মানের পোনা ও খাবারের সহজলভ্যতা, মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের প্রদত্ত প্রশিক্ষণ ও সরবরাহকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্য চাষীরা লাভবান হচ্ছেন, বাড়ছে উৎপাদন।
গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, মৎস্য চাষীরা এখন অনেক সচেতন। তাঁরা পুকুরে দুষণ প্রতিরোধ ও অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্যে এরাটর এবং মাছের সুষম খাবার নিশ্চিত করতে অটোমেটিক ফিডার পদ্ধতিও ব্যবহার করছেন।
নাটোর জেলায় মৎস্য চাষের প্রসার ও উন্নয়নে গৃহিত একাধিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্থানে অভয়াশ্রম তৈরী ও সংরক্ষণের ফলে মামাছের সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে। বিগত ২০১৭-২০১৮ বছরে দুই সহ¯্রাধিক মৎস্য চাষীকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। একই বছরে দেশীয় প্রজাতিসহ বিভিন্ন মাছ চাষের উপরে মোট ৪৭টি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে সাড়ে ছয় টন পোনা অবমুক্ত করা হয়। বিল নার্সারী কার্যক্রমের আওতায় ১৭ কেজি কার্প জাতীয় মাছের রেণু থেকে পোনা তৈরী করে বিলে অবমুক্ত করা হয়েছে।
বর্তমানে চলছে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের নতুন পদ্ধতির প্রসার। এছাড়াও সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ¯্রােতি জালের অবকাঠামো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা হচ্ছে। নলডাঙ্গা উপজেলার মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হালতি বিলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন।
সম্প্রতি পালিত হয়ে গেল মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮। শোভাযাত্রা, মৎস্য পোনা অবমুক্ত, মৎস্য মেলা আয়োজন, কৃতি মৎস্যজীবীদের পুরষ্কার প্রদান, মূল্যায়ন সভা, মৎস্য আইন বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মৎস্য বিভাগের কাজে আরো গতিশীলতা আসবে বলে জানালেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জেলায় মাছের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বাসসকে বলেন, এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্প্রসারণ কর্মী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গৃহীত পদক্ষেপের সুফল হিসেবে ভবিষ্যতে জেলায় মাছ উৎপাদনের পরিমাণ আরো বাড়বে। জেলার উদ্বৃত্ত মৎসের পরিধি বেড়ে উপকৃত হবেন দেশের ঘাটতি এলাকার মানুষেরা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে