ব্যক্তি স্বার্থের রাজনীতি দেশকে কিছু দিতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা বিএনপি’র দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, ব্যক্তি স্বার্থের রাজনীতি দেশ ও জনগনকে কিছু দিতে পারেনা।
বিএনপি- জামায়াতের দুঃশাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ব্যাক্তি স্বার্থে যে রাজনীতি, সে রাজনীতি কখনও জনগণ ও দেশকে কিছু দিতে পারে না। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। তাই এিনপি’র প্রতি জনগনের কোনো আস্থা নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা প্রমাণিত যে, বিএনপি’র ওপর জনগণের কোন আস্থা ও বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের শাসনামলে অর্থাৎ ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চলছিল।’
প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা অতীতে লুটপাট করেছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে আবারও তারা লুটেপুটেই খাবে এবং শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়বে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে ২০০১ -২০০৬ মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়ি ঘর লুটপাট এবং ২০১৩ সালে সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও এবং নির্বাচন প্রতিহত করার নামে প্রিসাইডিং ও সকারী প্রিসাইডিং অফিসার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়ে সেই আগুনে ফেলে বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ার হত্যা এবং ২৭ জন আইন-শ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যার অভিযোগ করেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসারও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
১৯৯৪ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠার পর আজ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪ বছর পূর্ণ হল। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এই দিনটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি এবং শ্লোগানের মাধ্যমে জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারের সাফল্যগাঁথা ও অর্জনসমূহ জনগণের কাছে তুলে ধরে আগামী সাধারণ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে তৃণমুল পর্যায় থেকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদেরকে শৃংখলার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং বিগত সাড়ে নয় বছরে তাঁর সরকারের অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।’
তাঁর দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণকে উন্নয়নের কথাগুলো বার বার বলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে হবে। কারণ সুখ পেলে জনগণ দুঃখের (অতীত স্মৃতি) কথা ভুলে যায়।’
১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ধানমন্ডির একটি বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সপরিবারে বন্দি থাকার সময় জয় জন্মগ্রহণ করেন উল্লেখ করে সে দিনের কথা অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২৭ জুলাই দিনটি আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে যখন বন্দি ছিলাম তখনই আমার প্রথম সন্তান জয় জন্মগ্রহণ করে। আজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সঙ্গে জয়ের জন্মদিন এক হয়ে গেছে। এজন্য আমার দোয়া ও আশির্বাদ সকলের জন্য।’
আমেরিকায় তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) দুর্নীতির মাধ্যমে এতটাকা বানিয়েছিল যে, আমেরিকার যে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র একজন অফিসারকে তারা কিনে ফেলল, জয়কে অপহরণ এবং হত্যা করার জন্য। যা আবার ধরা পড়লো সেই এফবিআই’র হাতে।
তিনি বলেন, বিএনপির যে নেতা এই কাজ করেছিল সে ধরা পড়ার পর তার বিচার হলো এবং সেখানে সেই নেতার শাস্তি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই মামলার রায়ে বেরিয়েছে- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত বৃদ্ধিজীবী শফিক রেহমান অর্থ-পরামর্শ দিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এই বিষয়ে এই দ’ুজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। তারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করলেও বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে হাজার হাজার কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মসজিদে ঢুকে মানুষ হত্যা করেছে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কলেজ ছাত্রী কেউ তাদের নির্যাতন-নৈরাজ্য থেকে রেহাই পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় খালেদা জিয়ার কারাগারে যাবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ১০ বছরেরও বেশী সময় আদালতে মামলা চললো, বিএনপি’র এত বাঘা বাঘা আইনজীবীরা প্রমাণে ব্যর্থ হলো যে, খালেদা জিয়া অর্থ আত্মস্যাৎ করেনি।
তিনি বলেন, আদালত তাকে জেল দিয়েছে। কাজেই আমাদের কাছে এখন মুক্তির দাবি করে লাভ কি, আমরা কিছুই করতে পারবো না।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ তাকে জেল দেয় নাই। সে রকম হলেতো ২০১৩,১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র সন্ত্রাস ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কারনে তাকে গ্রেফতার করা যেত।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রশ্ন করে বলেন, ‘যারা এতিমের অর্থের লোভ সামলাতে পারে না তারা কীভাবে দেশ চালাবে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাও গুরুত্বপুর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে না পারায় তাঁদের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো এমনকি দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি পর্যন্ত পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশ আবারো পিছিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশে উন্নয়নের ধারা সূচিত হলেও মাঝে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় গেছে এবং বিএনপি-জামায়াতের দু:শাসনের কারণেই দেশে জরুরি অবস্থা এসেছিল।
প্রধানমন্ত্রী ‘৭৫এর পট পরিবর্তনের পর ৬ বছর প্রবাসে জীবনে কাটাতে বাধ্য হয়ে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর দেশে ফেরার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দেশে ফিরেছি ,কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ভাত-ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি এ সময় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭ দশমিক ৭৮ ভাগ প্রকৃদ্ধ অর্জনে সক্ষম হয়েছি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আমাদের দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি।
২০০৮ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে তাঁর সরকার এই বর্তমান সময় পর্যন্ত মেয়াদে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের হারানো সন্মানকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে কারো কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির শতকরা ৯০ ভাগ আমাদের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে তাঁর সরকার যাত্রা শুরু করেছিল সেই লক্ষ্যে আজকের বাংলাদেশ ক্ষুধা মুক্ত হয়েছে।
তিনি সকলকে একযোগে কাজ করে দারিদ্র মুক্ত,মানুষের পুষ্টি নিশ্চিতও উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলারও আহবান জানান।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের জনগণ নগরের সব ধরনের সুযোগ- সুবিধা পাবে। যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করতে আগামী ২০২১-২০৪১ মেয়াদী নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শুধু প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নয়, বাংলাদেশের জন্য আমরা শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্লান করেছি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে