মাঝে এক বার শোনা গেল, সরকার গড়তে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোট করতে চাইছে পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই)। বিকেলের দিকে আবার সেটাকেই ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিল ইমরান খানের দল।
জেলবন্দি নওয়াজ় শরিফ গতকালই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের পক্ষে তেমনই ইঙ্গিত মিলল। তারা জানিয়েছে, পাক ভোটের ময়দান আদৌ এ বার সুষ্ঠু ছিল না। প্রচার পর্বে পরিকল্পিত ভাবেই দমিয়ে রাখা হয় নওয়াজ়ের দলকে। তবে ভোটের দিন রিগিং হয়নি বলেই দাবি তাদের।
এ দিকে ভোটগণনা এখনও অসম্পূর্ণ! অথচ কথা ছিল, ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসনে ফয়সালা হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই তাই ভোটগণনায় কারচুপি এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে শরিফের দল পিএমএল-এন এবং বিলওয়াল ভুট্টো জ়ারদারির পিপিপি। পাক নির্বাচন কমিশন যদিও দায় ঠেলছে যান্ত্রিক ত্রুটির দিকেই।
রাওয়ালপিন্ডিতে শরিফদের ৩০ বছরের দুর্গ ছিনিয়ে নেওয়াটা উল্লেখযোগ্য। তবে পিটিআই যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তা নিশ্চিত। এখনও পর্যন্ত ১১৮টি আসন পেয়েছে ইমরানের দল। আরও দু’টোতে এগিয়ে। তবে বাকি আসনের সবক’টি জিতলেও জাদু সংখ্যা (১৩৭) অধরাই থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে কোনও ছোট দল কিংবা নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে জোট করেই মসনদে আসতে হবে ইমরানকে। আজ এ নিয়ে দলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে বানি গালার বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন ইমরান। তাতে সরকার গড়তে জোটের অঙ্ক মিলেছে বলেই দাবি করেছে পিটিআই।
কিন্তু সরকার চালানোর ক্ষেত্রে এই জোটের অঙ্ক নিয়ে ‘কাপ্তান’ আদৌ হোমওয়ার্ক করেছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী জোট হিসেবে পিএমএল-এন এবং পিপিপি-ও ইমরানকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করাবে বলে মনে করছেন অনেকে। মিলিত আসন কিন্তু তাদেরও শতাধিক!
ইমরানের কাপ্তানিতে ‘কোচের’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শোনা যাচ্ছিল, পিটিআই-কে জেতাতে এ বার জান ল়ড়িয়ে দিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। দেশচালনায় সেনাই আসল কলকাঠি নাড়বে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। ইতিহাসে যেমনটা হামেশাই দেখা গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই আবার একটা ধাক্কা লেগেছে পিটিআই শিবিরে। কাল নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল, লাহৌরের ৯ নম্বর কেন্দ্রে জিতেছেন ইমরান খান। আজ ‘পরাজিত’ পিএমএল-এন নেতা সাদ রফিকের আর্জিতে সেই আসনে পুনর্গণনার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ভোটে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আজই ইসলামাবাদে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছিল পিএমএল-এন। কিন্তু কেন আগে থেকে তাদের এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি, এই অভিযোগে বৈঠকে যোগ দেয়নি পিপিপি। করাচিতে তারা আলাদা ভাবেই আন্দোলনে নামবে। সম্ভাব্য বিরোধী জোটে গোড়াতেই এই ভাঙনের ইঙ্গিত তাই আপাতত কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে ইমরান শিবিরে।
স্বস্তি দিয়েছে দেশি সংবাদমাধ্যমের প্রশংসাও। কাল টিভি-বক্তৃতায় ইমরান যা বলেছেন, অনেকেই তাকে ‘রাজনীতিক ইমরানের রাষ্ট্রনেতায় উত্তরণ’ বলছেন। ভোটে কারচুপির তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেও বাড়তি সমীহ আদায় করেছেন পিটিআই নেতা। অনেকে তাঁর বক্তৃতার সারবত্তাও খোঁজা শুরু করেছেন। তাঁর দলীয় ইস্তাহারে কেন আর্থিক উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়নি, সে প্রশ্নও উঠছে।
বিশ্ব জুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তাঁর সম্ভাব্য বিদেশনীতি নিয়েও। নরমে-গরমে শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন ইমরান। আর সেই সূত্রে আজই মাঠে নেমে প়ড়েছে বেজিং। চিনের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয়তে ইমরানকে আজ স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের থেকে সাবধান! ৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যেক চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক প্রকল্প নিয়ে এর আগে বহু বার সুর চ়ড়িয়েছেন ইমরান। আর তা ধরে এ বার মার্কিন সংবাদমাধ্যম বেজিং-ইসলামাবাদের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে চিন।
আমেরিকা কী বলছে? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আজ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে— দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং স্থিতাবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তারা পাকিস্তানের নয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে। তবে ভোটের পাকিস্তানে বাক্স্বাধীনতা কিংবা সংবাদমাধ্যমের উপর ছড়ি ঘোরানোর যে অভিযোগ উঠেছে, তা উদ্বেগ্নজনক।
পিটিআই-এর জয়ের পরে পাকিস্তানের নাগরিকদের অভিনন্দন জানালেন দলের প্রধান ইমরান খানের তৃতীয় তথা বর্তমান স্ত্রী বুশরা মানেকা। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ঈশ্বর এই দেশকে এমন একজন নেতা দিলেন যিনি সকলের খেয়াল রাখবেন। রক্ষা করবেন।’’