ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে গ্রেফতার হওয়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা কিশোরি আহেদ তামিমি মুক্তি পেয়েছেন। প্রতিরোধের সময় ইসরায়েলি সেনাকে থাপ্পড় মারার কারণে আট মাস কারাদণ্ডের শাস্তির মেয়াদ শেষে রবিবার ভোরে মুক্তি পেয়েছেন তামিমি। একই সঙ্গে তামিমির মাও মুক্তি পেয়েছেন। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এখবর জানিয়েছে।
রবিবার তামিমিকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন নবি সালেহ গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের বাড়ির ছাদে টানানো হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। বাড়ির উঠানে কয়েকশ চেয়ার রাখা রয়েছে। এখানে তামিমি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
আহেদ তামিমি’র বাবা বাসেম জানিয়েছেন, স্ত্রী-সন্তানের মুক্তির জন্য তিনি অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন।
ইসরায়েলি কারাগারের মুখপাত্র আসাফ লিবরাতি জানান, পশ্চিমতীর মুখি টুলকারেম চেকপয়েন্টে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে নিজ গ্রাম নবি সালেহতে পৌঁছাবেন।
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তামিমির বাড়িতে হানা দিয়েছিল দখলদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেদিন বাড়ির প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে দখলদার সেনাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ১৬ বছরের তামিমি। কথায় কাজ না হওয়ায় পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকা দুই সেনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেও লাভ হলো না। শেষে বাড়ি থেকে বের করে দিতে তাদের থাপ্পড় মারা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার এই দুঃসাহসিক ভূমিকার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ওই ঘটনায় তামিমি ও তার মাকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি সেনারা। একাধিক দফায় নেওয়া হয় রিমান্ডে। বিপরীতে ফিলিস্তিনের বাইরে যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে তার মুক্তির দাবি উঠে। ১৬ বছরের এক তরুণী হয়ে উঠেন ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি আন্দোলন ও তৃতীয় ইন্তিফাদার প্রতীকী চরিত্র।
ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ শহরের কাছেই নাবি সালেহ গ্রামের বাসিন্দা আহেদ তামিমি। অনেক বছর ধরে তার গ্রামে প্রতি শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মাত্র ৯ বছর বয়সে তামিমি প্রথম মিছিলে অংশ নেন।
২০১৫ সালে ১১ বছর বয়সে তার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। একটি ছবিতে মা ও চাচির সঙ্গে মিলে ইসরায়েলি সেনাদের হাত থেকে তার চাচাত ভাই মোহাম্মদকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। ছবিতে দেখা যায়, আহেদ ভাইকে বাঁচাতে এক ইসরায়েলি সেনার হাতে কামড় দিচ্ছে। ওই ছবি প্রকাশের দুই বছর পর আহেদকে তুরস্কে হানদালা সাহসিকতা পুরস্কার দেওয়া হয়। দখলদার বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবির জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান তাকে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানান। শিশু অধিকারের উপর একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার জন্য খোদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংগঠন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তবে দুঃখজনকভাবে মার্কিন প্রশাসন তাকে ভিসা দেয়নি