ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। আজ তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাস্তারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নয় বছর পর ঘরের বাইরে সিরিজ জিতলেন টাইগাররা।
সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচের শুরুর অর্ধেকটা মন মতোই করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। রান বন্যার সেন্ট কিটস মাঠে রানের খোঁজে ধুঁকতে হয়নি টাইগার ব্যাটসম্যানদের।
প্রায় বছর দুয়েক পর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের মিশনে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৩০১ রানে। স্বাগতিকদের এই রানের মধ্যে আটকে রাখার কৌশলেই নয় বছর পর ঘরের বাইরে সিরিজ জেতার স্বাদ পেলেন মাশরাফি-তামিমরা।
এর মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে তৃতীয়বারের মতো ওয়ানডে সিরিজে হারাল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
৩০২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে সেভাবে চড়াও হয়ে খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মারমুখী ছিলেন ক্রিস গেইল, করেন ৬৬ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ৭৩ রান।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে ৩৪ রান দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। রোভম্যান পাওয়েলের খুনে ব্যাটিংয়ে সেটা সম্ভব মনে হচ্ছিল। তবে ৪৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচের পাল্লা বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দেন রুবেল হোসেন।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে স্বাগতিকদের প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান রোভম্যান পাওয়েল। তবে বাঁহাতি পেসার চাপে ভেঙে পড়েননি। শেষ ৫ বলে দেন মাত্র তিনটি সিঙ্গেল।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তারে সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো টসে জেতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ম্যাচে করেন আগে ব্যাটিং, দ্বিতীয় ম্যাচে নেন আগে বোলিং। তৃতীয় ম্যাচে এসে আবারও আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক।
শুরুতে ব্যাটে নেমে আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আবারও বড় সংগ্রহ করেছেন তামিম ইকবাল। শেষদিকে ঝড় তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আগের দুই ম্যাচে বড় রান করতে ব্যর্থ হওয়া বিজয় এই ম্যাচেও আউট হয়েছেন অল্পতেই। ৩১ বলের ইনিংসে রান করতে পেরেছেন মাত্র ১০।আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেও। বন্ধু তামিমের সঙ্গে সাকিব আল হাসান আবারও গড়েন ইনিংসের ভীত গড়ে দেয়া জুটি।
চোখের পলকে মাত্র ১৬ ওভার ব্যাট করে এই জুটিতে যোগ হয় ৮১ রান। টানা তৃতীয় অর্ধসেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সাকিব ফিরে যান টপ এজ হয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়ে। আউট হওয়ার আগে সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৩ চারের মারে করেন ৩৭ রানে।
অর্ধশত পেরিয়ে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে নতুন করে ইনিংস গড়ার কাজে মন দেন তামিম। কিন্তু দারুণ শুরু করা মুশফিক অদ্ভুত এক শট খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাত্র ১২ রান করে। তার ব্যাট থেকেই আসে ইনিংসের প্রথম ছক্কাটি।
চতুর্থ উইকেট জুটি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে পেয়ে যেন খানিক নির্ভার হন তামিম। খেলতে শুরু করেন হাত খুলে।তুলে নেন ক্যারিয়ারের একাদশ ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তবে সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। ব্যক্তিগত ১০৩ রানের মাথায় দেবেন্দ্র বিশুর ওভারে মিড উইকেটে ধরা পড়েন তামিম।
তামিম ফিরে যাওয়ার পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সাব্বির-মোসাদ্দেকের আগেই ব্যাট হাতে নেমে যান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অপর প্রান্তে নির্ভরতার প্রতীক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকায় নির্ভয়ে খেলতে পারছিলেন মাশরাফি। রিয়াদ-মাশরাফির জুটিতে চোখের পলকে ২৫০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৪২ বলে ৫৩ রান পায় বাংলাদেশ। ২৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কার মারে ৩৬ রান করে ফেরেন মাশরাফি। অপর প্রান্তে বাংলাদেশ দলের ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে অবিচল ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু সাব্বিরের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক খেলছিলেন মাহমুদউল্লাহই। এতোক্ষণ ধরে উইকেটে থেকে বিশাল এক ছক্কার মারে রিয়াদ তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশতক। শুরুতে ব্যাটে-বলে এক করতে পারছিলেন না সাব্বির। ৪৯তম ওভারে পরপর দুই বলে দুটি ৪ মেরে পরের বলেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
তবে অপরাজিতই থেকে যান মাহমুদউল্লাহ। শেষপর্যন্ত তার দুর্দান্ত ফিফটিতেই ৩০০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষের দশ ওভারে আসে ৯৬ রান। মাত্র ৪৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কার মারে ৬৭ রান করেন রিয়াদ। ৫ বলে এক চারের মারে ১১ রানের ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ছয় উইকেটে ৩০১ রানে।