ক্যাথলিক চার্চের ভিতরে যাজক এবং বিশপদের কাছে সন্ন্যাসিনীদের যৌন হেনস্থার ইতিহাস নতুন নয়। বিষয়টি নিয়ে নির্যাতিত সন্ন্যাসিনীরা এত দিন প্রকাশ্যে না এলেও এ বার হাওয়া বদলাচ্ছে। ক্যাথলিক চার্চের কড়া বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার নানা প্রান্তের অত্যাচারিত সন্ন্যাসিনীরাও বলছেন #মিটু।
যেমন বছর কুড়ি আগে ‘কনফেশন’-এর (স্বীকারোক্তি) সময়ে এক ইটালীয় যাজক তাঁর যৌন হেনস্থা করেন বলে এই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুললেন এক সন্ন্যাসিনী। চার্চের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আমলই দেননি বলে সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানান। বরং কয়েক বছর বাদে ফের অন্য এক যাজকের অত্যাচারের শিকার হতে হয় তাঁকে। অন্য দিকে এই সপ্তাহের গোড়াতেই সরাসরি টিভির পর্দায় এসে চার্চের ভিতরে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন চিলের এক ছোট ক্যাথলিক সংগঠনের ছ’জন সন্ন্যাসিনী। কর্তৃপক্ষ তাঁদের স্বার্থে কোনও পদক্ষেপই করেননি বলে অভিযোগ তাঁদেরও। কিছু দিন আগে কেরলেও বিশপের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক ভারতীয় সন্ন্যাসিনী।
ক্যাথলিক চার্চের অন্দরে এই অত্যাচারের প্রতিরোধে ভ্যাটিকানের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পুরনো। তবে এ বার কি কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ? বিষয়টিতে প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ ভ্যাটিকান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাটিকানের এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত যাজকদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্থানীয় চার্চের হাতেই রয়েছে।’’ অত্যাচারিতদের প্রকাশ্যে আসার উৎসাহ দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। তবে কিছু যাজকের জন্য সংগঠনের গায়ে কালি ছেটানোর ব্যাপারে কড়া আপত্তি রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
তবে সমস্যাটির শিকড় অনেক গভীরে বলে দাবি এক বিশেষজ্ঞের। কারণ, ক্যাথলিক চার্চের নিয়মে, সন্ন্যাসিনীদের মর্যাদা চিরকালই বিশপ এবং যাজকদের চেয়ে কম। তাই এর সুবিধে নেন তাঁরা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকায় সন্ন্যাসিনী হতে গেলে স্থানীয় যাজকের অনুমতি প্রয়োজন। অনুমতির বদলে অনেক সময়েই ওই মহিলাদের যৌন সম্পর্কে বাধ্য করেন যাজকেরা। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাঁরাই গর্ভপাতের ব্যবস্থা করান বলে দাবি তাঁর।