সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল আটটা থেকে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। এখন চলছে গণনা। নির্বাচনে ভোট বর্জন, বাতিল, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও জালভোটের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণও বন্ধ করা হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে তিন সিটিতেই ভাল নির্বাচন হয়েছে।
সিলেটে বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সিলেট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সিলেটে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর শেষপ্রান্ত ২৭নং ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ। এ সময় ছাত্রদল বাধা দিলে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আতঙ্কে ভোটকক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। এছাড়া ভোটাররাও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে কাজী জালাল উদ্দিন স্কুল কেন্দ্র একদল যুবক দখল করার চেষ্টা চালালে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
সিসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই কেন্দ্রে গণ্ডগোল হয়েছে। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কে বা কারা ঝামেলা করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি ও ভোট কক্ষ ৯২৬টি। এ সিটিতে মেয়র প্রার্থী মোট ৭ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), সিপিবি-বাসদের মো. আবু জাফর (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের (হরিণ)।
রাজশাহীতে কেন্দ্রেই বুলবুলের অবস্থান
বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। তবে নগরীর বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে দুপুর ১২টা মধ্যে ব্যালট পেপার ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই কেন্দ্রের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এ নির্বাচনে তিনি তার ভোটটিও দেননি। সন্ধ্যায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ মেয়রপ্রার্থী।
রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩জন। ভোট কেন্দ্র ১৩৮টি ও ভোট কক্ষ ১ হাজার ২৬টি। এই সিটিতে মেয়র প্রার্থী মোট ৫ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ মোর্শেদ (হাতি)।
বরিশালে বর্জন-বাতিল দাবির মধ্যেই শেষ ভোট
বরিশাল সিটি করপোরেশনে দুই প্রার্থীর বর্জন ও তিন প্রার্থীর স্থগিতের আবেদনের মধ্যেই শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। বেলা ১১টার দিকে বিএনপির প্রার্থীর মজিবর রহমান সারোয়ার ও ইসলামী আন্দোলনের ওবায়দুর রহমান মাহবুব ভোট বর্জন করেন। একটার দিকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে সিপিবির প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও জাতীয় পার্টি ইকবাল হোসেন বেলা ভোট স্থগিতের আবেদন জানিয়েছেন।
এই সিটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় প্রার্থীই তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। ভোটকেন্দ্র ১২৩টি ও ভোট কক্ষ ৭৫০টি। এ সিটিতে মেয়র প্রার্থী মোট ৬ জন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মো. মজিবর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের ডা. মনীষা চক্রবর্তী (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবাইদুর রহমান মাহাবুব (হাতপাখা)।
এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ
ভোট নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তিন সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত দেখছি না। এ সময় সরকার প্রচণ্ডভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও অভিযোগ করে তিনি।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর হামলা, গ্রেফতার ও কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
ভোটগগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে ২৬, সিলেটে ৫ ও রাজশাহীতে ১৭ কেন্দ্র থেকে দলীয় এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
রাজশাহী সিটিতে প্রায় ২৪ জন এজেন্ট নিখোঁজ রয়েছেন বলেও দাবি করেন রিজভী। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির পরাজয়ের শঙ্কা থেকে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য নানা মিথ্যাচার করছে। এই ধরনের মিথ্যাচারের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো বিএনপির পুরনো অভ্যাস।
দলের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদ মাহবুবউল আলম হানিফ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় প্রত্যেকটি নির্বাচন আবাধ সুষ্ঠু ও উৎসব মুখর পরিবেশে পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আজকে সকাল থেকে তিন সিটিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসব মুখর পরিবেশে হচ্ছে।
এ সময় আওয়ামী লীগের এ নেতা নিজেদের এজেন্টকে বের করে দেয়ারও অভিযোগ তুলেন। হানিফ বলেন, বরিশালের ১নং ওয়ার্ডে সৈয়দ মজিদুল ইসলাম কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী আওয়ামী লীগের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। ১৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী নৌকা মার্কার এজেন্টকে বের করে দিয়েছেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে আবারও তাদের প্রবেশ করানো হয়েছে। এছাড়া ১৭নং ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগের এজেন্ট বের করে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
সিলেটে বিএনপি বিশৃঙ্খলা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, সিলেটের জালাল উদ্দিন স্কুল ও মিনাবাজার কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।