আসামে নাগরিক তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ মানুষ বাদ পড়ার অভিযোগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামছে মতুয়া মহাসংঘ৷ বুধবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে রেল অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছে তারা৷ মতুয়ার এই সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন রেলযাত্রীরা৷
অভিযোগ যে, সোমবার জাতীয় নাগরিক অন্তর্ভূক্তির সর্বশেষ খসড়া তালিকায় আসামে বসবাসরত ৪০ লক্ষের বেশি মানুষকে অবৈধ নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ যা নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ সহ আসাম-ত্রিপুরার মতো রাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷ বিজেপি সরকারের অন্তর্ভূক্তিকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এককাট্টা হচ্ছে দেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী দল৷ এনআরসি (National Register of Citizens)ইস্যুতে এর মধ্যেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এ রাজ্যে মতুয়া মহাসংঘও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এবার কোমর বাঁধছে৷ সংঘের সহ সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, “আসামে যে ৪০ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে বহু মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি আছেন৷ সংঘের প্রধান বড়মা বীণাপাণি দেবী বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন৷ আসামের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা বুধবার, হাবড়া, ঠাকুরনগর, বনগাঁ সহ বেশ কিছু জায়গায় রেল অবরোধ ও পথ অবরোধের কর্মসূচি নিয়েছি৷ এদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন পথে আমরা আন্দোলনকে নিয়ে যাব৷” সংঘের সম্পাদক সুরেশ চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ৯-১০টা, এক ঘন্টা রেল অবরোধ করা হবে৷ এছাড়া খুব শীঘ্রই অসম ভবনে বিক্ষোভ দেখাবে তারা৷ সমস্যা না মিটলে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
মতুয়াদের বিপুল ভোটেই প্রথম তৃণমূল কংগ্রেস উত্তর ২৪ পরগনায় জিততে আরম্ভ করে৷ যদিও অনেক আগে থেকেই তাদের ভোট উত্তর ২৪ পরগনায় একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল৷ সিপিএমের ‘শিক্ষক’ অনিল বিশ্বাস নিজে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ছিলেন৷ বাইরে কমিউনিস্ট ভাবমূর্তি বজায় রাখলেও তাঁর মতুয়া পরিচয়কে কাজে লাগিয়েই সিপিএম উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের দান চালত৷ মতুয়ারা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ৷ দেশভাগের আগে ভয়াবহ দাঙ্গার সময় তাঁরাই মূলত গণনিধন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন৷ বাপুজি স্বয়ং সেই দাঙ্গার আগুন নেভাতে পূর্ববঙ্গে পদার্পণ করেন৷ পরবর্তীকালে ১৯৫০-এর দশক এবং তারও পরে বাংলাদেশ মুক্তি আন্দোলনের সময়েও নমঃশূদ্র সহ অসংখ্য গরিব মানুষের উপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণনিধনের পীড়নযন্ত্র নেমে আসে৷ তাঁরা ভারতে এসে আশ্রয় নেন৷ যদিও তাঁদের বেশিরভাগই এখন এদেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃত৷ তাঁদের সন্তানসন্ততিরাও তাই ভারতের নাগরিক হিসাবেই গণ্য হন৷
যদিও মতুয়া মহাসংঘের রেল রোকো নিয়ে এর মধ্যেই মতুয়ারাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বনধ, রেল অবরোধ কর্মসূচির বিরোধী৷ কারণ, তাতে সাধারণ মানুষকে দুর্গতিতে পড়তে হয়৷ এই অবস্থায় আসামের অন্তর্ভূক্তিকরণ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে যদি হাবড়া, ঠাকুরনগর, বনগাঁয় রেল অবরোধ হয়, তাতে আসামে অন্তর্ভূক্তিকরণের কারণে বিপদে পড়া মতুয়াদের কী সুরাহা হবে– তা নিয়েই মতবিরোধ দেখা দিয়েছে৷
উল্লেখ্য, তৃণমূলের মন্ত্রীসভা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ঠাকুর পরিবারের ছেলে তথা মতুয়া সংঘের সংঘাধিপতি মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন৷