সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ভোট শেষে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার পর বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর জয় নিশ্চিত হয়ে গেল। ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিতে তিনি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের চেয়ে ৪,৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন। তবে গোলযোগের জন্য দুই কেন্দ্রে ভোট স্থগিত আছে।
সোমবার সিলেট নগরীর উপশহরে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা কালে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান এই কথা জানান।
তিনি ১৩২ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করে জানান, দুই প্রার্থীর মধ্যে যে ব্যবধান তার চেয়ে স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোট বেশি হওয়ায় স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন সংশোধন আইনি এর ৩৭ (২) উপবিধি অনুযায়ী ওই দুই কেন্দ্রে আবার ভোটগ্রহণ শেষে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে।
তবে স্থগিত যে দুই কেন্দ্রে ভোট হবে তা ব্যবধানের চেয়ে বেশি হলেও তার সংখ্যা বিবেচনায় নিলে আরিফুলের জয় নিশ্চিতই বলা যায়। কারণ দুই কেন্দ্রে ভোট আছে মোট চার হাজার ৭৮৭। এর মধ্যে গাজী বোরহানুদ্দীন মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২২২১ ভোট ও হবিনন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৫৬৬ ভোট রয়েছে। আর কামরানের থেকে আরিফুলের ভোটের ব্যবধান রয়েছে ৪৬২৬।
অর্থাৎ এই দুই কেন্দ্রের প্রায় শতভাগ ভোট পেলেই কেবল কামরান জিততে পারবেন, যেটিকে প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। ফলে আরিফুলের জয় নিশ্চিতই বলা যায়।
সিলেটের এই ফল ঘোষণায় জাতীয় নির্বাচনের বছর দেশে ভোট হওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশনের চারটিতে আওয়ামী লীগের মেয়ররা বসতে যাচ্ছেন। ২০১৩ সালে বিজয়ী হওয়ার পর কেবল সিলেটের দখল রাখতে যাচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে গত ১৫ মে খুলনায় জিতেছেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, ২৬ জুন গাজীপুরে জিতেছেন একই দলের জাহাঙ্গীর আলম। আর আজ সোমবার একই দিন ভোট হয়েছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে। এর মধ্যে রাজশাহী ও বরিশালে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
সিলেটে অন্য প্রার্থীরা যত ভোট পেলেন
ভোটে আরেক আলোচিত প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর এসহানুল মাহবুব জুবায়ের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়েছেন। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মোয়াজ্জেম হোসেন খান দুই হাজার ১৯৫ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। আর বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়ে পরে ভোট থেকে সরে যাওয়া বদরুজ্জামান সেলিম পেয়েছেন ৫৮২ ভোট। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের আবু জাফর পেয়েছেন ৯০০ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের পেয়েছেন ২৯২ ভোট।
সব মিলিয়ে তিন লাখ ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৯১ হাজার ২৮৯ জন। অর্থাৎ ভোটদানের হার এখানে ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশের কিছু বেশি।
সিলেটে জয়ের আনন্দে অভিযোগ ভুললো আরিফুল হক
কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট চলাকালে দুপুরে নির্বাচন বন্ধ করতে লিখিত আবেদন, আর বিকালে ভোট শেষে ফলাফল আগাম প্রত্যাখ্যান। কিন্তু এই আরিফুল হক চৌধুরীই আবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে যা যা হয়েছে তা ভুলে যাওয়ার কথা বললেন বিএনপির প্রার্থী।
সোমবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টির ঘল ঘোষণা করেন যেখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের চেয়ে আরিফুল এগিয়ে চার হাজার ৬২৬ ভোটে। কিন্তু গোলযোগের জন্য স্থগিত দুই কেন্দ্রে ভোট চার হাজার ৭৮৭। ফলে আইন অনুযায়ী বাকি দুই কেন্দ্রে ভোট নিয়েই পরে বিজয়ী ঘোষণা করতে হবে।
বিকালে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করলেও একেকটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর যখন জানা যায় দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান খুবই কম, তখন আরিফুল যান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আর যখন জয় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখনই ধন্যবাদ জানান সিলেটবাসীকে।
সিলেটবাসীকে জয় উৎসর্গ করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘এ জয় সিলেটবাসীর।’ একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনকে ঘিরে যা কিছু হয়েছে তা ভুলে গিয়ে সবার সঙ্গে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান।
অথচ বিকাল চারটায় ভোট শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল ছিলেন ক্ষুব্ধ। ‘ফল যাই হোক, প্রত্যাখ্যান করলাম’-এ কথা উল্লেখ করে তিনি নির্বাচন নিয়ে আপত্তি জানান। বলেন, ‘এটা ভোট চুরি না, দিনে-দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এবং তাদের সহায়তায় ভোট ডাকাতি হয়েছে।’
কামরানকে বিজয়ী ধরে নিয়ে আরিফুল বলেন, ‘এই জয়, জয় না। এটা মীর জাফরের জয়। এই জয়ের মাধ্যমে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আমার পরাজয়টা বড় ব্যাপার না, এ নির্বাচনের ফলে নতুন প্রজন্ম একটি ভুল জিনিস শিখছে।’
তারও আগে বেলা একটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামানের দপ্তরে গিয়ে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন আরিফুল।
আর সকালে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির প্রার্থী অভিযোগ করেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট দেয়া হয়ে গেছে আগের রাতেই। আর এর প্রমাণ থাকার কথাও বলেন তিনি।