পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহল উন্নয়নের ধারায় বদলে গেছে

ডেস্ক রিপোর্ট

মাত্র তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বদলে গেছে পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহলের দৃশ্যপট। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমে বদলে গেছে সেখানকার মানুষের জীবনমান। তাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনারও অবসান হয়েছে।

নানান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে ছিটমহলবাসীরা দারুন খুশি । রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুতসহ সরকারের সামাজিক নিরপত্তা কর্মসূচির সকল সুবিধা এখন তাদের হাতের নাগালে। তাদের ভাষায়, ‘হামরা এলা খুব সুখত আছি। এর চেয়ে হামার আর বেশি চাহিবার নাই’।
জানা গেছে, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম , লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল ছিল ৫১টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি আলোকে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল উভয় দেশের সাথে একীভূত হয়।

ছিটমহল এলাকা বাংলাদেশ ভুখন্ডের সাথে একীভূত হওয়ার পর এ এসব এলাকার উন্নয়ন ও নাগরিকদের অধিক সুবিধা দিতে সরকার ব্যাপক উন্নয়নমুলক কার্যক্রম শুরু করেছে। বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। রাস্তা ঘাট ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, গুচ্ছগ্রাম, কমিউনিটি ক্লিনিক, খাল খনন, বাজার শেড, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এছাড়াও ছিটমহল নাগরিকদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি-ভিজিএফসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীর সকল সুবিধা তাদের মাঝে নিশ্চিত করা হয়েছে।

পঞ্চগড় নীলফামারী জেলার সমন্বয় বিনিময়ের সাবেক কমিটির সভাপতি ও বিলুপ্ত গাড়াতী ছিটমহলের সাবেক সভাপতি মফিজার রহমান জানান, পঞ্চগড় সদর ৭৮নং গাড়াতী ছিটমহলে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ বিঘা জমির উপর আইসিটি ভবন নির্মান কাজ শুরু পথে। ১টি কলেজ নির্মান করা হয়েছে। ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি হাইস্কুল, ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু আলিম মাদ্রাসা, ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি প্রাইমারী স্কুল, ১টি প্রতিবন্ধী স্কুল, ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি কমিউনিটি সেন্টার, ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি পোস্ট অফিস, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি ব্রীজ, ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি বাজার সেট নির্মাণ, ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ী, ১৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৯শ’ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, ৫৩০০ বিঘা জমির খতিয়ান পেয়েছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলার ৩৬টি বিলুপ্ত ছিটমহলে প্রায় ৯০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। এর মধ্যে বোদায় ৫০ কিলোমিটার ও দেবীগঞ্জের দহলাখাগড়াবাড়ী ছিটমহলে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ শেষ করা হয়েছে। নিমার্ণ করা হয়েছে ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৪টি প্রাইমারী স্কুল, ৪টি হাট শেড, ৭টি মসজিদ ৫টি মন্দির। বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৫ কিলোমিটার খাল খনন কর্মসূচী।
এছাড়া জেলা পরিষদ ১৬২ কোটি টাকর ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। শিক্ষার উন্নয়নে জেলা প্রশাসন ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তর ১ হাজার ১৬৫ জনকে বয়স্ক ভাতা, ৪৯১ জনকে বিধবা ভাতা এবং ৩২৪ জনকে প্রতিবন্ধি ভাতা প্রদান করেছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩৮০ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং ৩ হাজার ২৫০ জনকে ভিজিডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মন জানান, সরকার ছিন্নমুল জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের জন্য দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত কোটভাজনী ছিটমহলের বালাসুতি এলাকায় সিডিআরপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০টি পরিবারের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ একটি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। শিশুরা এখন গর্বিত বাংলাদেশী হিসেবে নিজ পরিচয়ে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। অবহেলিত ছিটমহলগুলো আলোকিত হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বেশ খুশি বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা।

পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নুরল ইসলাম সুজন বলেন, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে উপজেলার অবলুপ্ত দহলা খাগড়াবাড়ী, বালাপাড়া, কোটভাজনীসহ ৩৬টি ছিটমহলে ২৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২২৬ কিলোমিটার এলাকায় ৯ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সংযোগের ফলে এ অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ধারণা, চাকরির আবেদন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিচ্ছেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম  জানান, পঞ্চগড়ের সাবেক ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারোখার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরপরই সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমরা তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করেছি, তাদের ভোটার তালিকা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ছিটমহলবাসীরা দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে তারা বঞ্চিত ছিল তাদেরকে মূল ভূখন্ডের সাথে সমতা আনার জন্য সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে দোহলা খাগড়াবাড়ী, কোটভাজনী, নাটকটোকা, বসুনীয়াপাড়া ছিটমহলে নাগরিকরা আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। পটকা ফুটিয়ে, আতশবাজি উড়িয়ে তারা রাতভর আনন্দ উদযাপন করেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে