আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এদিকে আসাম ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের আসামে যারা নিজেদের নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করতে পারেননি। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন তালিকায় নাম না ওঠা কয়েক লাখ মানুষের মনে। তালিকায় নাম না থাকার অর্থ তাঁরা নাগরিকত্ব হারাবেন। তারপর? সেই উত্তরটা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। আসামের শাসক দল বিজেপি হোক বা খোদ সরকার— কেউই এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারছেন না। আর সেখান থেকেই ক্রমাগত ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি। আর তার সঙ্গে গোটা রাজ্য জুড়ে উড়ে বেরাচ্ছে নানা গুজব।
আর তার মধ্যেই নাম না ওঠা মানুষরা অপেক্ষা করে আছেন ৭ আগস্টের জন্য। কারণ নাগরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই দিন নাম যাদের তালিকায় নেই, তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে কেন তাঁদের নাম নেই।
প্রতীক হাজেলা, আসামে সরকারের মূখ্য সচিব এবং নাগরিক পঞ্জিকরনের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বুধবার রাতে বলেন, “৭ আগস্ট থেকে এনআরসির বিভিন্ন সেবা কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে কেন নাম বাদ পড়ল।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফের সময় দেওয়া হবে নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য ফের আবেদন করার। সেই সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন যে, ওই সময়ের মধ্যে যাদের নাম উঠেছে তাদের নাম নিয়েও যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। অর্থাৎ যাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে তাঁরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নন, যে চূড়ান্ত তালিকায় তাঁদের নাম থাকবেই।
এই অনিশ্চয়তার মাঝেই আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের বুধবারের ঘোষণা। গুয়াহাটি শহরের বুকে বাড়ি সুবিমল বিশ্বাসের। তিরিশ বছরের বেশি সময় তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কর্মী ছিলেন। তাঁর নামও নেই এই তালিকায়। টেলিভিশনে তিনি খবর দেখতে গিয়ে জানতে পারেন নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে— যাঁদের নাম এই তালিকায় থাকবে না, তাঁদের নাম এখনই বাদ যাবে না ভোটার তালিকা থেকে। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকাতে নাম না থাকলে? পরবর্তীতে কী নাম থাকবে? সেটা জানেন না এঁরা কেউ।
এই চরম বিভ্রান্তির মাঝেই এনআরসি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, চূড়ান্ত তালিকাতে নাম না থাকলেও ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই যে তাঁদের ডিটেনসন ক্যাম্পে পাঠানো হবে।
এই ঘোষণা আদৌ স্বস্তি আনতে পারেনি মানুষের মনে। গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা হাফিজুল আলি। তাঁর প্রশ্ন, “তা হলে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে একের পর এক ক্যাম্প তৈরি করছে কেন?”
এই অবিশ্বাসের আর অনিশ্চয়তার আবহর মধ্যেই আসামের কয়েক লাখ মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের নাগরিক প্রমাণ করার।
এদিকে আসাম ইস্যুতে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য গত সোমবার ভারতের আসাম রাজ্য সরকার যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ করেছে, তাতে প্রায় ৪১ লাখ লোকের নাম বাদ পড়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাবি, যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা ভারতীয় হাইকমিশনারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত নয়। বরং যাদের নাম বাদ পড়েছে, তারা আপিল করতে পারবেন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।
আসামের বিষয়টি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার মতো কোনো সংকট তৈরি করবে না বলেও উল্লেখ করেন শ্রিংলা।