খান মোহাম্মদ ফারাবী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন দেশবরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণ। অকাল প্রয়াত কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও নাট্যকার ফারাবী জন্মের ৬৬ বছর পূর্তিতে সাহিত্য একাডেমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়োজন করে ‘খান মোহাম্মদ ফারাবী সাহিত্য পুরস্কার ও স্মৃতি-সম্মেলন’। জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে কবির হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, মত ও পথ সম্পাদক র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ সামাদ, কবি শামীম রেজা, হাসিন আরা কাশেম, ডা. জাভেদ মাহমুদ শিপলু, ড. ফাহিমা খান তৃণা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, রাজনীতি মানুষের মুক্তির অন্যতম পথ। ফারাবী ছিল এক্টিবিস্ট। পাশাপাশি প্রজ্ঞাবান। বেঁচে থাকলে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারতেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আর্থ -সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মলেন্দু গুণ একটি অপরিহার্য নাম। তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আছে, বঙ্গবন্ধু আছে। নির্মলেন্দু গুণকে সম্মান জানাতে পেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী গৌরব বোধ করছে।
নির্মলেন্দু গুণ ফারাবীকে একজন শক্তিমান লেখক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ওই বয়সে ফারাবী যতটা পরিণত ছিলেন-এটা বিরল। অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতাটি তিনি এতো চমৎকার অনুবাদ করেছিলেন, মনে হয় না এটা অনুবাদ কবিতা। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে অধিক পঠন-পাঠন না থাকলে এমনটা সম্ভব হতো না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ফারাবীর প্রস্তুতি এবং বিচক্ষতা দুইই ছিল। তাঁর মতো শক্তিমান লেখকের অল্প বয়সে চলে যাওয়া সত্যি মেনে নেয়া যায় না।
সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, ফারাবীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে মূল্যায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবাদনের জন্য সাহিত্য একাডেমি এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার পাওয়া দেশবরেণ্য কবি নির্মলেন্দু গুণকে পুরস্কার তুলে দিতে পেরে সাহিত্য একাডেমি আনন্দিত।
উল্লখ্য, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি আয়োজন করে আসছে খান মোহাম্মদ ফারাবী স্মৃতি সম্মেলন। ২০১২ সালে সাহিত্য পুস্কার প্রবর্তন করে খান মোহাম্মদ ফারাবী সাহিত্য পুরস্কার। প্রথমবার এ পুরস্কার প্রদান করা হয় ফারাবীর কলেজ জীবনের শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে। ২০১৪ সালে প্রখ্যাত কবি আসাদ চৌধুরী, ২০১৫ সালে লেখক শান্তনু কায়সার, এবং ২০১৬ সালে লেখক-প্রাবন্ধিক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
খান মোহাম্মদ ফারাবী ১৯৫২ সালের ২৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ১৪ মে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ৪টি। কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা ও অন্যান্য’, প্রবন্ধের বই ‘এক ও অনেক’, একটি নাটক ‘আকাশের ওপারে আকাশ’ ও একটি শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘মামার বিয়ের বরযাত্রী’। শেষ বইটির গল্পগুলো তিনি ক্লাস সিক্স থেকে এইটের মধ্যে লিখেছিলেন। তার রচনাবলি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।