প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার একজন মানুষ। তিনি আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ কামালের ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ কামাল যে সময়ে ক্রীড়া সংগঠন গড়েছিলেন, সে সময়ে খেলাধুলা ও ক্রীড়ায় বিশেষ করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এবং বাস্কেট বলে কোন শৃঙ্খলা ছিল না। শেখ কামালের বড় বোন শেখ হাসিনা বলেন, কামাল বড় হয়েছিল খেলাধুলা করার মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দশটি জেলার ৩০০টি ইউনিয়নে অপটিকেল ফাইবার উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, শেখ কামালের জন্ম হয়েছিল আমার পরেই। কামাল আমার দু’বছরের ছোট। আমরা এক সঙ্গে খেলাধুলা করেছি। তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য। দেশে সকল আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের দেহরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কামাল ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাশাপাশি কামাল ছিলেন, একজন ভাল ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এবং বাস্কেটবল খেলোয়াড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল লোকসঙ্গীতের একটি মিউজিকেল ব্যান্ড স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠি গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, কামাল নাটক, গান করতেন, সীতার বাজাতেন এবং ভাল বক্তৃতা করতে পারতেন। তিনি এবং কামাল ছোট বেলায় একসঙ্গে যন্ত্রসঙ্গীত বাজানো শুরু করেন। যদিও আমি এটি বেশিদিন চর্চা করতে পারি নাই। কামাল দীর্ঘদিন চর্চা করেছে এবং যন্ত্রসঙ্গীতে তার অসাধারণ হাত ছিল।
শেখ কামাল মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এ রাতে জাতির পিতা এবং তাঁর বড় পুত্র শেখ কামাল ঘাতকদের হাতে প্রথম শহীদ হন।
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষীদের একজন হাবিলদার কুদ্দুসের দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নুর চৌধুরী তাদের কয়েকজন সঙ্গীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করে এবং এই নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটায়। তারা বাড়িতে প্রবেশ করেই প্রথম কামালকে দেখতে পায় এবং হুদা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এই গুলি কামালের পায়ে লাগে। কামাল লুটিয়ে পড়ে যায়। ঘাতকরা পরে আবার ফিরে আসে এবং আহত কামালকে হত্যা করে। তাকে বনানী কবরস্থানে মা ও পরিবারের শাহাদত বরণকারী অন্যান্য সদস্যদের পাশে দাফন করা হয়।
শেখ কামাল ছিলেন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের একজন পাইওনিয়ার এবং তিনি ছিলেন দেশের প্রভাবশালী স্পোর্টিং ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। যুদ্ধের ওপর তার ভাল প্রশিক্ষণ ছিল। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে কমিশন লাভ করেন।
শেখ কামাল ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল আতাউল গনি ওসমানির এইড দ্যা ক্যাম্প (এডিসি)।
শেখ কামাল শাহিন স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি আজাদ বয়েজ ক্লাব ক্রিকেট প্রথম বিভাগে এবং স্পোর্স ক্লাবের বাস্কেট বলে প্রথম বিভাগেও খেলতেন। তিনি ঢাকা থিয়েটার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন উচ্চারণ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।