ডেস্ক রিপোর্ট
শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে গণফোরাম সভাপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সে সময় চক্রান্ত ব্যর্থ হলেও তিনি থেমে নেই।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা কামাল হোসেন ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মিরপুর থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে হারার পর দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। গঠন করেন গণফোরাম। সে সময় তার দলটি আলোড়ন তুললেও মোটেও আগাতে পারেননি তিনি। এরপর যতগুলো নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়েছেন, ততগুলো নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছেন কামাল হোসেন আর তিনি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ডাক দিয়েছেন, যদিও সেই প্রক্রিয়ায় কেউ সাড়া দিচ্ছে না।
আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রাক্তন বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সবার নাম কিন্তু আমরা জানি।’
পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা তো বাংলাদেশের উন্নয়ন করে ফেলছে। এখন কী করার? প্রথম ষড়যন্ত্র হলো একটি জুডিশিয়াল ক্যু করে শেখ হাসিনাকে কী করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে সরানো যায়।’
‘আপনারা দেখেছেন, প্রথমে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকশে যখন তার প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তখন রাজাপাকশেকেও নেমে যেতে হয়েছে। তারপর পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফকে নামিয়ে দিয়েছেন তার প্রধান বিচারপতি। তারপরে নেপালে এবং তারপরে আমাদের প্রাক্তন বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সবার নাম কিন্তু আমরা জানি।’
এ সময় উপস্থিত অতিথিরা উচ্চস্বরে সেসব ষড়যন্ত্রকারীর নাম জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তাদের তো চিনবেনই। ড. কামাল হোসেনকে আপনারা চেনেন না?’
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে শাসনব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু বিরূপ মন্তব্য করেন। পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠে। আর এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে গত ১৪ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে তিনি বিদেশে যান। কিন্তু আর না ফিরে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
সিনহা বিদেশ যাওয়ার পরদিন সুপ্রিমকোর্ট থেকে এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণসহ গুরুতর অনিয়মের ১১টি অভিযোগ আনা হয়। আর সেগুলোর তদন্ত করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানান। তবে এর কী অগ্রগতি, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারপর এই ষড়যন্ত্র যখন বিফলে গেছে, আমি জানি আমাকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিটিং জাজেরা বলেছেন যে, তারা (জাজেরা) একটি অনুষ্ঠানের জন্য ড. কামাল হোসেনকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি (ড. কামাল) তাদেরকে (বিচারক) সিনহার ব্যাপারে বকাঝকা করেছেন। কেন সিনহার ব্যাপারে তারা (জাজরা) প্রতিবাদ করেনি, কেন সিনহাকে তারা সরিয়েছে?- এই কথা বলেছেন।’
‘ষড়যন্ত্র চলছেই’
এসকে সিনহার সঙ্গে চক্রান্ত বন্ধ হলেও চেষ্টা এখনও চালু আছে বলে সতর্ক করেন আইনমন্ত্রী। বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন যাতে চলমান থাকে, এই আন্দোলনের ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা যায়, সেজন্য এই কামাল হোসেন, এই ইউনূছ (ড. মুহম্মদ ইউনুছ), এই খালেদা জিয়ার যারা সহযোগী তারা কিন্তু এটার মধ্যে নাক গলানো শুরু করে।’
‘তারপরে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। তাদের যৌক্তিক দাবি কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। ঠিক আছে, সব ঠিক করে দেব। তারাও ফিরে যেতে চেয়েছে এবং তারা ফিরে গেছে। এর মধ্যেও একটা ষড়যন্ত্র, সরকারকে ফেলে দিতে হবে।’
‘এগুলো কিসের আলামত? এগুলো হচ্ছে, উনারা কোনো একটা পেছনের দরজা দিয়ে যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে। যাতে আবারও যে উন্নয়নের পথে যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিতি করে তুলেছেন, সেটাকে আবারও সেই জায়গা থেকে ফেলে দিতে হবে। পাকিস্তানের নিচে নামাতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনিসুল হক বলেন, ‘মওদুদ সাহেব বলেন আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের দরকার নাই, আমাদের সেইভ বাংলাদেশ দরকার। উনাদের সেইভ বাংলাদেশের নমুনা হলো- হত্যার বিচার হবে না, আর ক্যান্টনমেন্টে প্রত্যেক শুক্রবার হত্যাযজ্ঞ চলবে।’
‘আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে উন্নত হয়ে যাবে। তাহলে তো উনাদের ঘুম হবে না। এটা হচ্ছে উনাদের নিয়ম নীতি।’