চলতি বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার এলাকায় কয়েক বছরের মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বাংলাদেশ সরকার ও সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ভূমি ধসও বন্যার ঝুঁকিতে থাকা হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার বলেন,এ পর্যন্ত সরিয়ে নেয়া সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন এমন আনুমানিক ৪১ হাজার রোহিঙ্গার অর্ধেকের বেশী প্রায় ২৪ হাজার শরণার্থীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১১ মে থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক ৪৯ হাজার শরণার্থী বিরূপ আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ হাজারের বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রবল বাতাস ও ঝড়ে। ১৫ হাজারেরও বেশী ভূমিধসে, ৫ হাজার ৪শ’ বন্যায়। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা ও অগ্নিকান্ডে তিন হাজারের বেশী রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা বসতি প্রধানত আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা কয়েক মাসের প্রশমন প্রচেষ্টার মূল্য তুলে ধরে। স্পিন্ডলার বলেন, প্রতিদিন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রাণঘাতী ও অন্যান্য ঘটনা এড়ানো হয়। ইউএনএইচসিআর ও সহযোগীদের বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে চালিত প্রচেষ্টার সহায়তায় কাজ করছে। হাজার হাজার বিরূপ আবহাওয়া-কবলিত রোহিঙ্গা পরিবারের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে সংঘটিত সহায়তা টিম পাঠানো হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র বলেন, ‘কমিউনিটি আউটরিচ মেম্বার, সেফটি ইউনিট ভলান্টিয়ার ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীসহ কয়েকশ’ প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করা হয়েছে এবং সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক মাস ধরে এসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবককে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তা গত কয়েক সপ্তাহে পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়েছে। তারা বেশ সংগঠিত ও সমন্বিতভাবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।
পাশাপাশি এই বিশাল শরণার্থী বসতির মানুষগুলো যাতে বিরূপ আবহাওয়া মোকাবেলা করতে পারে তার জন্য নিবিড় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর এই বিশাল বসতির কারণে খুবই বড় পরিসরে কাজ করতে হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির প্রায় ১৩ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। বর্তমানে এটিই বিশ্বে এ ধরনের সবচেয়ে বড় বসতি। এখানে ৬ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নির্মিত কুতুপালং সাইটে প্রায় ৩২ কিলোমিটার রাস্তা, ৪৫ কিলোমিটার ধাপ, ৬৩ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও কাঠামো এবং ৯৪ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সম্পন্ন বা মেরামত করা হয়েছে। ২ হাজার ৩২৪ মিটার ব্রিজ করা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ হিসেবে ১১৬টি স্টোরেজ কন্টেইনার স্থাপন করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের ২০টি সামাজিক ভবন বা স্থাপনা উন্নয়ন করা হয়েছে।