বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নানা নাটকীয়তা তাকে ঘিরে থাকে। তবে সব প্রতিকূলতা মাড়িয়ে জয় ছিনিয়ে আনেন আরিফ।
প্রথমেই দলীয় পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হয় আরিফকে। এ কারণে মহানগর বিএনপির বিরাগভাজন হলেও নিজের ‘ক্যারিশমা’ দিয়ে পুরো বিএনপি পরিবারকে তার পক্ষে কাজে লাগান।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে তার কর্মীদের পুলিশ কর্তৃক আটক ও শেষ দিকে একাধিক মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশি ‘হয়রানি’ এবং নির্বাচনের দিন জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগের পরও ভোটে এগিয়ে থাকেন আরিফুল হক চৌধুরী। অবশেষে স্থগিত দুই কেন্দ্রে শনিবার পুনঃভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন তিনি।
নানা নাটকীয়তাপূর্ণ সিসিক নির্বাচনে আরিফ শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেছেন। তার এই জয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরবাসী জানান, এবারের নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী বিজয়ী হওয়ার পেছনে প্রধান দুটি কারণ হলো- উন্নয়ন প্রশ্নে আপসহীনতা এবং বিগত মেয়াদের পাঁচ বছরের মধ্যে ২৯ মাস কারাবন্দি থাকা।
এছাড়াও আরিফের রাজনৈতিক কৌশল, হকার উচ্ছেদে লাঠি হাতে নিজে নেমে পড়া, যানজট নিরসনে রিকশার আলাদা লেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা অন্যতম কারণ।
নগরীর ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু খালেদ চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচনে মানুষ ধানের শীষ কিংবা নৌকা প্রতীককে ভোট দেননি, নগরবাসী ভোট দিয়েছেন উন্নয়নকামীকে। যারা মনে করেছেন আরিফ উন্নয়ন করতে পারবেন, তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার হলেও ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন।
দক্ষিণ সুরমার ২৭নং ওয়ার্ডের নুরুল হক ও ৫নং ওয়ার্ডের ইয়ারব আলী বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী ভোটারদের কাছ থেকে ‘সিমপ্যাথি’ আদায় করতে পেরেছেন। তার গত মেয়াদে ২৯ মাসের কারাজীবন ভোটারদের মনে সমবেদনা জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
তারা বলেন, আরিফুল হক নির্বাচনী প্রচারণায় বার বারই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ২৯ মাস কারাগারে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এটা ভোটারদের টেনেছে।
পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দি থাকার বিষয়টিও প্রচারণায় গুরুত্ব পেয়েছে। এতে করে তার ভোট বেড়েছে বলে মনে করেন এই দুই ভোটার।
সিসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই সিলেট মহানগর বিএনপি আরিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা গত বছরের শেষদিকে আরিফকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ করে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পর পরই মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ পাঁচজন দলীয় মনোনয়ন চান। তারা একজোট হয়ে আরিফের বিরোধিতা করেন।
এই বিরোধিতার কারণে রাজশাহী ও বরিশালে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হলেও সিলেটে তা ঝুলে যায়। অবশেষে ২৭ জুন আরিফকে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এসময় নিজেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচনে কাজ চালিয়ে যান মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। একই সঙ্গে জোটের প্রধান শরিক জামায়াতও তাদের প্রার্থী নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়ে।
নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বদরুজ্জামান সেলিমকে বহিষ্কার করা হয়। ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে সরে পড়েন সেলিম। কিন্তু জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করেন।
তবে প্রশাসন এবং দল ও জোটে বিরোধিতা সত্ত্বেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো সিলেট সিটির নগরপিতার আসন নিজের হাতেই রেখেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। প্রথমবারের সফলতা তিনি কতটুকু ধরে রাখতে পারেন এখন সেটিই দেখার বিষয়।