ক্রীড়াঙ্গনের বাতিঘর বঙ্গবন্ধু-পরিবার

আরিফ সোহেল

রক্তস্নাত আগস্ট মাস। এই মাস এলেই ভেসে ওঠে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবার-পরিজনের মুখাবয়ব। বাংলা ও বাঙালির নিখাদ আপনজন বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন নির্জন কারাগারে। বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য, শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতন মুক্ত করার জন্য যিনি ‘রাজনীতি’ বেছে নিয়েছেন- সেই মহৎ মানুষটি ও তার পরিবারের সদস্যদের রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে বর্ণাঢ্য পদচারণা; রয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল অতীত, রয়েছে ক্রীড়ার প্রতি অনুরাগ আর অবদানের অসংখ্য স্বাক্ষর। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জনে যে পরিবারটির সংগ্রাম-ত্যাগ-অবদানের কথা জাতির সামনে সুস্পষ্টÑ সেই পরিবারটিই বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ‘ক্রীড়া-পরিবার’।
আরেক দিক থেকে ভাবতে গেলে বলতে হয়Ñ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে ক্রীড়া পরিবার ভাবতে পারাটা বেশ বিরল ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু-পরিবার বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত একমাত্র উদাহরণও। বিস্মিত হওয়ারই বিষয়, এক পরিবারে এতজন ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব! যারা কি না এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক একটি বাতিঘর!

স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানও ছিলেন একজন পরিচিত ফুটবলার। বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন কৃতী ফুটবলার; খেলতেন হকি, ভলিবলও। খেলাধুলার অনুরাগের পাশাপাশি ক্রীড়া-উন্নয়নে ছিল তার বিশেষ নজর। আপাদমস্তক ক্রীড়াপ্রাণ বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল এ আঙিনায় যেন পিতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। মেজ ছেলে শেখ জামাল ছিলেন ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়। এদিকে শেখ কামালের সহধর্মিণী মেধাবী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের নাম যেন ক্রীড়াঙ্গনের সবুজ মাঠের প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে। তারা সবাই আজ ফ্রেমবন্দি। কিন্তু জীবনের বাঁকে বাঁকে তারা এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন করেছেন সমৃদ্ধ।
ক্রীড়াপ্রাণ বঙ্গবন্ধু-কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়। যিনি ক্রীড়াবিদ না হয়েও ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আপনজন, দায়িত্বশীল অভিভাবক, নিবেদিতপ্রাণ দর্শকÑ ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনাকালেই বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের বড় অর্জনগুলো স্পর্শ করেছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে ওয়ানডে ও টেস্ট মর্যাদা কিংবা ফুটবলে সাফের স্বর্ণ বিজয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম জড়িয়ে রয়েছে। জড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট, টোয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, এসএ গেমস ও বাংলাদেশ গেমস আয়োজনের মতো ঘটনার সঙ্গে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপের আসরে ছুটে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানারও ক্রীড়ার প্রতি রয়েছে বিশেষ উৎসুক্য। তাকেও বড় আয়োজনে দর্শকসারিতে সরব দেখা গেছে। কখনও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, কখনও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল কিংবা মুজিব ববিকেও স্টেডিয়ামে মাঝে মধ্যে দেখা যায়।

universel cardiac hospital

বঙ্গবন্ধুর পিতা ফুটবলার শেখ লুৎফর রহমান
বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান পেশাগত জীবনে সেরেস্তাদার হলেও খেলাধুলার প্রতি তার ছিল বিশেষ অনুরাগ। তিনি গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের ফুটবল টিমের অধিনায়কও ছিলেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি ক্লাবটির সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। ফুটবল খেলাতে শেখ লুৎফর রহমান বিশেষ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেনÑ “আমার আব্বাও ভাল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আর আমি মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আব্বার টিম ও আমার টিম যখন খেলা হত তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভাল ছিল। মহকুমায় যারা ভাল খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম।” তিনি আরও বলেছেন, “অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। খেলোয়াড়দের বাইরে থেকে আনত। সবাই নামকরা খেলোয়াড়। বৎসরের শেষ খেলায় আব্বার টিমের সাথে আমার টিমের পাঁচদিন ড্র হয়। আমরা তো ছাত্র; এগারজনই রোজ খেলতাম, আর অফিসার্স ক্লাব নতুন নতুন প্লেয়ার আনত।”

ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক বঙ্গবন্ধু
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ক্রীড়ানুরাগী ও ক্রীড়াবিদ। রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর সামনে খেলোয়াড় শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিয়ার হয়তো খুব দীর্ঘ নয়। তবে ক্রীড়াঙ্গন নিয়েই যাদের চিন্তা-চেতনা তাদের কাছে ক্রীড়া সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্য অম্লান। হয়তো সে কারণেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠিত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা আজও চিরভাস্বর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আত্মজীবনীতেই বলছেন, “ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম।” শৈশব-কৈশোরে তার খেলাধুলার প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি অন্যত্র বলেছেন, “ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতাম।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে খেলাধুলায় অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ভলিবল, বাস্কেটবল ও হকিও খেলতেন। তিনি স্কুল ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার উদ্যোগই ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মিশন স্কুলে গড়ে উঠেছিল ফুটবল ও ভলিবল দল। স্কুলজীবনে বঙ্গবন্ধুর বিরামহীন ক্রীড়াচর্চা ক্রমান্বয়ে তাকে পরিপক্বতার দিকে নিয়ে যায়। একসময় তিনি প্রাদেশিক পর্যায়ের ফুটবল দলেও জায়গা করে নেন। ১৯৪০ সালের শুরুতে তিনি রাজধানী ঢাকায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। নিয়মিত খেলার সুযোগ না থাকলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪১ থেকে আমৃত্যু ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুমে বগুড়ায় একটি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল। এই টুর্নামেন্টে তার নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে বাস্কেটবলও খেলেছেন। রাজনীতির কারণে মাঠকে একটু দূরে ঠেলে দিলেও ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালেও কখনও কখনও তিনি প্রাণের টানে চলে যেতেন ক্লাব প্রাঙ্গণে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার আমলেই ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি ক্রীড়াঙ্গনের কিশোর-যুবকদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ অনুভব থেকেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে নিজ থেকে খতিয়ে দেখতেন। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে) একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা মাঠে গড়ায়। স্বাধীনতা-উত্তর ক্রীড়াঙ্গনের এই অভিযাত্রা প্রথম ম্যাচটি উদ্বোধন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেনÑ ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। ওই সময়ে এই সংস্থাটি শিক্ষা-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অধীনে পরিচালিত হতো। পরে ক্রীড়াঙ্গনের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদের পাস হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার তার পরিকল্পনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

শেখ কামাল এক অনন্য ক্রীড়াব্যক্তিত্ব

বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু-সন্তান শেখ কামাল ছিলেন একজন অতুলনীয় ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। তিনিই প্রথম এ দেশে আধুনিক ধারার ক্লাব ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু ক্লাব প্রতিষ্ঠা নয়Ñ শেখ কামাল বিদেশি কোচ এনে শক্তিশালী আবাহনী দল গঠন করে ক্রীড়াঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেন। সেই আবাহনী আজও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্লাব; সেই আবাহনীর অগ্রযাত্রা আজও অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিতকতায় ‘আবাহনী লিমিটেড’ গঠনের মাধ্যমে শেখ কামালের রেখে যাওয়ার স্বপ্ন আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ ক্রীড়াপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরামহীনভাবে করে যাচ্ছেন।
শুধু ফুটবল নয়, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব শেখ কামাল বাস্কেটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ও অ্যাথলেটে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও একই সালে বাস্কেটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স দলের খেলোয়াড় ছিলেন শেখ কামাল। একই বছর সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হয়েছিলেন দ্রততম মানব। এবং তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্যাডমিন্টনের দ্বৈতে রানার্সআপও হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা মেট্রোপলিশ ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে ফুটবল এবং ক্রিকেট খেললেও বাস্কেটবল খেলেছেন বাবার প্রিয় ক্লাব ওয়ান্ডারার্সের হয়ে। তার নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ১৯৭৩ ও ১৯৭৫ সালে বাস্কেটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। শেখ কামাল রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়ার পরও খেলাধুলাই তার কাছে বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল।
আজ শেখ কামাল নেই। তারপরও আবাহনী ক্রীড়া চক্র তার নামকে বুকে ধারণ করে ক্রীড়াঙ্গনে জ্বলজ্বল করছে। আর শেখ কামালের হাতেগড়া আবাহনীকে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায় কিংবা বাইরে থাকার সময়ও, অর্থাৎ সবসময়Ñ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছেন।

পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ কামালের পাশাপাশি শেখ জামালকে আবাহনীর সাথে জড়িত করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম অগ্রপথিক শেখ কামালসহ ক্লাবের সঙ্গে জড়িত অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তার হাত ধরেই স্বাধীনতার গৌরবজনক সাফল্যের পর আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করে আবাহনী। ক্রিকেটার শেখ কামাল পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও রান করতে পারতেন। তিনি বল হাতে ওপেনিং করেছেন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশার সঙ্গে। শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য। তবে শুধু ক্রিকেট নয়Ñ সেখানে তিনি ফুটবল ও বাস্কেটবল দলেও ভূমিকা রেখেছেন। এবং একজন অ্যাথলেট হিসেবে শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অংশ হয়ে আছেন।

চ্যাম্পিয়ন সুলতানা কামাল


১৯৭৩ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত গ্রামঢু ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল জাতীয় দলের ক্রীড়াবিদরা। সে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন সুলতানা কামাল খুকি। ওই আসরে যাবার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু সুলতানা কামাল খুকিকে বললেন, ‘বাঙালীর মান রাখতে পারবি তো?’ খুকির সাহসী উত্তর ছিলÑ ‘পারব।’ খুকি ওই আসরে লংজাম্প ইভেন্টে দ্বিতীয় হন তিনি। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কোনো পদক জয়। ফলে এটাই হয়ে দাঁড়ায় রেকর্ড। তিনি দেশে ফেরার পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু খুকিকে বাহবা দিয়েছিলেন। খুকি তখনও বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ হননি। খুকির বড় ভাই বাবুল ছিলেন শেখ কামালের বন্ধু। তার মাধ্যমেই পরিচয়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠনতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখাদেখি। ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ দুজনেরই। তাই একে একে দুই মিলে যায় একসময়ে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে ১৯৭৫ সালেও হার্ডলসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন খুকি।

খুকি শুধু একজন ভালো অ্যাথলেটই ছিলেন না, ছিলেন দক্ষ সংগঠকও। মেয়েরা যেন খেলাধুলায় মন ঢেলে দেয়, সে জন্য রীতিমতো কাউন্সিলিংও করাতেন তিনি। ১৯৬৬ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের লংজাম্পে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জেতেন স্কুলপড়–য়া খুকি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হন খুকি। ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান উইমেন্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের মধ্যে সেরা হন তিনি। ১৯৭৩ সালে ১০০ মিটার হার্ডলসেও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন সুলতানা কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাথলেটিক্সে প্রথম নারী ‘ব্লু’ সুলতানা কামাল খুকি। অ্যাথলেটিক্সের ‘গোল্ডেন গার্ল’ সুলতানা কামাল রোকেয়া হল ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পাকিস্তান প্রাদেশিক গেমসেও রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন সুলতানা কামাল।

ক্রীড়াবিদ শেখ জামাল
বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য শেখ জামালের নামও আলো ছড়াচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালও ছিলেন খেলোয়াড়। ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি তার ছিল বিশেষ ঝোঁক। তিনি প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছেন। ক্রীড়াপ্রাণ শেখ জামাল ১৯৭২ সালে আবাহনী ফুটবল দলেও ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকা ফুটবল লিগে খেলেছিলেন। তোফাজ্জল হোসেন স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তিনি ‘শেখ জামাল একাদশ’-এর হয়ে খেলেছেন। সে বছর ‘শেখ জামাল একাদশ’ দলটি শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছিল। শেখ জামাল আবাহনী ক্রীড়া চক্রে ক্রিকেটও খেলতেন। তার নামে গড়ে উঠেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে