বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন

বিশেষ প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি কলার’ এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে পারেন।

রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।

খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, মার্কিন সরকার একজন রাজনৈতিক আততায়ীকে আশ্রয় দিয়েছে। ২০১৪ সালে ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন লিখেছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত একজন খুনি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছেন। এ অবিচারের অবসান ঘটতে হবে। রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি সূত্র জানিয়েছেন রাশেদ চৌধুরী শিকাগো, সিয়াটল, আটলান্টাসহ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে বসবাস করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন যৌথভাবে দ্য কলারকে জানিয়েছেন, রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ইতিবাচক আভাস পেয়েছেন। গত জুলাই ও আগস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র ও বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন ডেইলি কলারকে বলেন, এক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন এগিয়ে আসায় আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

গত ২৪ ও ২৫ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে. সুলিভান ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন গত ১ আগস্ট বিচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন।

ডেইলি কলারকে এ বিষয়ে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, নীতিগত কারণে কোনো বিশেষ প্রত্যার্পণ অনুরোধ নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। এছাড়া নির্দিষ্ট কোনো মামলার তথ্যও প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

জিয়াউদ্দিন বলেন, পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে প্রশংসিত হবেন। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যেসব অপরাধী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো খবর। আমরা আশা করছি, ট্রাম্প প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নেবে।

তিনি আরো বলেন, রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠালে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হবে বলে মার্কিন সরকারকে আশ্বস্তও করেছে বাংলাদেশ সরকার। রায় পর্যালোচনার জন্য তাকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও সাবেক ওবামা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

রাশেদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্ব পান। তিনি নাইরোবি, কুয়ালালামপুর ও ব্রাসিলিয়া দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৯৬ সালে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই বছরেই রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও বঙ্গবন্ধুর খুনি একেএম মহিউদ্দিনকে ২০০৭ সালে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে