তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতারা জোটের শরিক জামায়াতকে ছাড়ার পরামর্শ দিলেও এখনই দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা দুইদিন বৈঠক করে সংগঠন গোছানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করলেও জামায়াত নিয়ে তেমন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা।
গত শনি ও সোমবার দুই দফায় ম্যারাথন বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বৈঠক শেষে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে বৈঠক সূত্রে জামায়াতের বিষয়ে এমন অবস্থানের কথা জানা গেছে।
দলটির নেতারা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া জাতীয় ঐক্য গড়তেও জামায়াত সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না বলেও মনে করেন।
বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করতে ইচ্ছুক বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না জামায়াত। এখন পর্যন্ত তাই দেখছি। তবে ভবিষ্যতের কথা এখন বলা মুশকিল।’
নিজেরা বৈঠক করার আগে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ড। এতে আগামী নির্বাচন, আন্দোলন, চেয়ারপারসনের মুক্তির পাশাপাশি জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছেড়ে দিতেও পরামর্শ দেয়া হয়। বিশেষ করে সিলেটে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে জামায়াত প্রার্থী দেয়ায় মাঠ পর্যায়ের নেতাদের ক্ষোভ ছিল বেশি।
দলের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ‘শতকরা শতভাগ না হলেও ৮০ ভাগ নেতাই এ নিয়ে কথা বলেছেন।’
ওই বৈঠকে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, “সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী থাকার পরও বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত বিএনপির জন্য কোনও সমস্যা নয়। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাক দেওয়া ‘জাতীয় ঐক্য’ করতে জোট থেকে জামায়তকে বাদ দেওয়া দরকার।”
বিএনপি সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি নেতা দুলু বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন, একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ আরও অনেকে বিএনপির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে রাজি আছেন। ফলে এখন দলের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে জামায়াতকে বাদ দিয়ে সরকারের বাইরে থাকা ডান-বাম সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করা।’
তবে জামায়াতকে ছেড়ে কামাল হোসেন আর যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে ঐক্য গড়লে ভোটের লড়াইয়ে লাভ নাকি লোকসান হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় বিএনপি। কারণ, দেশের ১৭টি জেলায় জামায়াতের দেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট আছে। আর গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্টের শক্তি নেই সেভাবে। যদিও তাদের নেতাদের এক ধরনের ভাবমূর্তি আছে যেটাকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়া যাবে বলেও বিএনপিতে মত আছে।
এখন দুই দিকের দিয়ে সমীকরণ নিয়ে হিসাব নিকাশ করা বিএনপি তৃণমূল নেতাদের মতামত নিয়ে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সেখানে দলীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি জামায়াত নিয়ে মতামতের বিষয়েও আলোচনা হয়। তবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাতীয় ঐক্য গড়তে জামায়াত নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শুনছি না। মনে হয় জামায়াত নিয়ে কোনো সমস্যা হবে।’
বিএনপির জামায়াত ছাড়ার আলোচনা অবশ্য এখনই প্রথম নয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারার পর জামায়াতের কারণে ভরাডুবি হয়েছে-এই মত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে জানায় বিএনপির তৃণমূলের নেতারা।
সে সময় জাতীয় নির্বাচনে হারের কারণ জানতে কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু কমিটি গঠন করে তৃণমূলের মতামত জানে দলটি। আর গঠন করা ১০টি কমিটির মধ্যে বেশিরভাগই জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেয়। তবে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব সুপারিশ গ্রাহ্য করেননি।
দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিদেশি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘সময় মতো জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত’ নেয়ার কথা জানান। তবে তিনি আর এ বিষয়ে পরে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।