ইমরান খানের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ!

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শনিবার শপথ নিয়েছেন সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান। তিনি এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, যেখানে কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সামনে রয়েছে হাজারো চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জের কয়েকটির বিষয়ে তাকে কঠিন এবং দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এএফপির একটি সংবাদ বিশ্লেষণে এ ধরনের পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়েছে-

অর্থনীতি:

বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সংকট এখন অনেকটা সুতোর ওপর হাঁটছে। দেশটির নতুন সরকারকে শুরুতেই এই সংকট মোকাবেলা করতে হবে। অর্থমন্ত্রী হতে যাওয়া আসাদ ওমর বলেছেন, এই সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাহায্য নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

গত পাঁচ বছর ধরে দেশটির বাজেট ঘাটতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। একাধিকবার রুপির অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে লাফিয়ে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি।

ইমরান খান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ব্যবসার নিয়ম-কানুন সহজ করা এবং কর আদায় বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

জঙ্গিবাদ:

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দমন অভিযানের ফলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, জঙ্গিবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন দেশটি সেটা নিতে পারেনি। এখনো চোখ ধাঁধানো হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা।

নির্বাচনের সময় একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে একাধিক প্রার্থীসহ দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন। বোমা হামলায় এতো প্রাণহানি ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক।

জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি:

রক্ষণশীল পাকিস্তানে পরিবার পরিকল্পনা সুবিধা সীমিত হওয়ায় এশিয়ার সবচেয়ে বেশি জন্মহার এই দেশটিতে। প্রত্যেকটি নারীর গড়ে তিনটি করে শিশু আছে বলে বিশ্বব্যাংক এবং সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়।

দেশটিতে ১৯৬০ সালের পর থেকে জনসংখ্যা পাঁচগুণ বেড়েছে। জনসংখ্যা এখন ২০ কোটি ৭০ লাখ স্পর্শ করেছে বলে গত বছরের আদমশুমারির খসড়ায় দেখা যায়। অবশ্য পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে অতীতে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নেননি ইমরান খান। এখন দেখার বিষয় তার সরকার কিভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার মোকাবেলা করে।

পানি সংকট:

বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্তৃপক্ষ যদি দেশটির ক্রমশ আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠা পানি সংকট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পাকিস্তান ‘ইকোলজিকাল’ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটি সর্বাত্মক পানির অভাবে পড়তে পারে।

এই সংকট মোকাবেলায় অবকাঠামো তৈরির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার। পানি সংরক্ষণের বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করে কিছুটা কাজ হতে পারে। এর আগে নিজের দলের উদ্যোগে ‘বিলিয়ন ট্রি সুনামি’ কর্মসূচির অধীনে তার দলের ঘাঁটি খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে গাছ লাগানোর উদ্যোগ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ওই অভিজ্ঞতা পানি সংরক্ষণের কাজে লাগাতে পারেন ইমরান খান।

বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক:

পাকিস্তান দেশটির ৭১ বছরের ইতিহাসে অধিকাংশ সময়েই ছিল সামরিক শাসনের অধীনে। বেসামরিক সরকার আর সেনাবাহিনীর মধ্যেকার ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দেশটির গণতন্ত্রের জন্য বড় বাধা বলে মনে করা হয়।

তবে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো দেশটিতে একটি বেসামরিক সরকারের হাত থেকে আরেক বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনায় নতুন আশার সঞ্চার হয়।

কিন্তু এরপরই সামরিক কর্তৃত্বের ওপর বেসামরিক কর্তৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা এবং চিরশত্রু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নিলে দেশটির তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে ‘সুপ্ত অভ্যুত্থান’ শুরু হয়। নওয়াজকে ২০১৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং গত জুলাইতে দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তার দলকে সেনাবাহিনী নিশানা করেছে বলে অভিযোগ করেন নওয়াজ, যদিও তারা তা অস্বীকার করেছে।

এদিকে ইমরান খান ইতোমধ্যে ভারতকে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। কারও সাহায্য ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন দাবি করে শুক্রবার পার্লামেন্টে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টের এখানে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে।’

এখন দেখার বিষয় ক্রিকেট বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইমরান খান রাজনীতির খেলায় কতটা লড়তে পারেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে